মানুষ সামাজিক জীব, সমাজের বন্ধন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না- তাই প্রয়োজন সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে জানা, একে অপরকে কীভাবে অভিবাদন জানাতে হবে সেটাও অবগত হওয়া। মুসলিম জাতির অভিবাদন জানানোর উন্নত পদ্ধতি সালাম। সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দন জ্ঞাপক, উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন। সালাম আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর অন্যতম। সালাম প্রদানের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করে। সমাজকে শান্তি ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। সালাম দেওয়া ও এর জবাব দেওয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ায় এবং মুসলিমদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলে। সালামের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদের সুরা নিসার ৮৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন সালামপ্রাপ্ত হবে, তখন তোমাদের প্রতি প্রাপ্ত সালামের) চেয়েও উন্নতভাবে সালাম দেবে, অথবা ওই ভাষাতেই সালামের জবাব প্রদান করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বিষয়ের হিসাব সংরক্ষণকারী।’ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম হতে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন কর। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য প্রদান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর। মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তুমি রাতে সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, যখন দুজন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয় সালাম মুসাফাহা ও করমর্দন করে, তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসাবিদ্বেষ দূর হয়। অহংকার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সালামের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ সৃষ্টি হয়। মুসলিম শরিফের ৪৬৩১ নম্বর হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ তোমরা ইমান আনয়ন না করবে ততক্ষণ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভালো না বাসবে, ততক্ষণ তোমরা ইমানদার হিসেবে গণ্য হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে, আর তা হলো তোমরা পরস্পরের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার ও কর্তব্য আছে। জিজ্ঞেস করা হলো ইয়া রসুলুল্লাহ সেগুলো কি কি? তিনি বললেন, ‘যখন তুমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দেবে। সে যখন তোমাকে দাওয়াত দেবে তখন তুমি তার দাওয়াত কবুল করবে। সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইবে তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে, সে হাছি দিয়ে যখন আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তুমি তার হাছির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে। সে যখন অসুস্থ হবে তখন তাকে দেখতে যাবে। সে যখন মারা যাবে তখন তুমি জানাজা ও দাফনকাফনে অংশ নেবে। সালাম পরস্পরের প্রতি দয়ামায়া, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ এবং সহমর্মিতা জাগ্রত করে। মানবমনে অহংকার, বড়ত্ব, হিংসাবিদ্বেষ অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ দূর হয়। সালামের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়, ইহজীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে সালামের বিকল্প নেই। নবীজি (সা.) বলেছেন যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে, আগে সালাম প্রদানকারী গর্ব অহংকার থেকে যেমন মুক্ত থাকে তেমনি বিনয়ী হতে পারে। অহংকার ব্যক্তিকে কলুষিত করে আর বিনয় মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। অহংকার শত্রুতা সৃষ্টি করে আর বিনয় শত্রুও পরম বন্ধুতে পরিণত করে। প্রত্যেক মুসলমানের অহংকার নামক মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচতে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো উচিত। নবীজি (সা.) মিশকাত শরিফের ৪৪৩১ নম্বর হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন ঘটাও।’ বুখারি শরিফের ৪৬২৯ নম্বর হাদিসে এসেছে নবীজি (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, ইসলামে উত্তম কোনটি? জবাবে তিনি বললেন, অন্যকে খাদ্য খাওয়ানো এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।
লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা