রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালাম আজাদের দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজার পর নড়িয়া মসজিদের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কালামের মৃত্যুতে ঈশ্বরকাঠি গ্রামে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। পরিবারের লোকজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা আবুল কালাম আজাদকে এক নজর দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমান। স্বজনদের কান্নায় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
প্রিয়জন হারানোর কান্না যেন থামছেই না নিহতের স্ত্রীর। স্বামীকে হারিয়ে দুই অবুঝ শিশুসন্তানকে নিয়ে স্ত্রী পিয়ার আহাজারিতে যেন আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কাঁদতে কাঁদতে আবুল কালামের স্ত্রী বলেন, আর্থিক টানাপোড়েন আর হতাশা নিয়েই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন প্রিয়জন। অভাবের যন্ত্রণা কখনো পরিবার বা সন্তানদের বুঝতে দেননি। স্ত্রী পিয়া জানান, শুধু স্ত্রী-সন্তান নয়, ভাই-বোনদের সমস্যায়ও পাশে দাঁড়াতেন আবুল কালাম। বন্ধুবান্ধব আর পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতিও ছিল তার সহানুভূতি। হাস্যোজ্জ্বল আর নির্মোহ এ মানুষটিকে হারানোর বেদনা সইতে পারছেন না কেউই। পিয়া বলেন, গতকাল (রবিবার) সে (আবুল কালাম) যখন বাসা থেকে বের হয়, তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে চলে যাওয়ার পরও আমি দরজা বন্ধ করতে পারছিলাম না। জানি না তখন কেন যেন আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিল। আগে তো কখনো এমন হয়নি। এখন আবুল কালাম আমাকে সারা জীবনের জন্য কান্না উপহার দিয়ে চলে গেলেন। আমি দুই শিশুসন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? কে আমাদের পাশে থাকবে?
আবুল কালাম আজাদের বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, আমার উপার্জনক্ষম নিরপরাধ ভাইটি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে মারা গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।
আবুল কালামের মৃত্যুতে শোক জানাতে পরিবারের কাছে এসেছিলেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, আশ্বাস দিয়েছেন পাশে দাঁড়ানোর। এর আগে নারায়ণগঞ্জে রবিবার প্রথম জানাজা শেষে রাত ১টার দিকে আবুল কালামের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে।
এদিকে রাজধানীর মেট্রোরেল এবং দেশের সব ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। এতে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারগুলোর বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এগুলোর গুণগত মান সঠিকভাবে যাচাই করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা জরুরি।
আইনজীবীর আবেদনে বলা হয়, দেশের অবকাঠামো প্রকল্পে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিয়ারিং প্যাডের মান যাচাই অপরিহার্য। সম্প্রতি মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় জনগণের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। অন্যদিকে পুরোদমে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সাময়িক সময়ের জন্য বিজয় সরণি-ফার্মগেট-বিজয় সরণি অংশে মেট্রোরেলের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।