দেশের বাজারে বর্তমানে মানভেদে কেজিপ্রতি পিঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের আশা, নভেম্বরের মধ্যে নতুন পিঁয়াজ বাজারে এলে দাম আরও কমবে। এমন পরিস্থিতিতেই ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন একদল ব্যবসায়ী। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে পিঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই; বরং চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। সরকারি হিসাবে, দেশে বছরে ৩৫ লাখ টনের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টন। তবুও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জমা পড়েছে প্রায় ৩ হাজার আমদানি অনুমতির আবেদন। অথচ এক মাস পরই বাজারে আসবে স্থানীয় নতুন পিঁয়াজ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পিঁয়াজ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের লক্ষ্য স্থানীয় উৎপাদককে টিকিয়ে রাখা এবং তাদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। এমনকি দুজন কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। আমরা চাই না, সেই দুঃখজনক ইতিহাস আবার ঘটুক। বর্তমানে পর্যাপ্ত পিঁয়াজ সংরক্ষিত আছে এবং দামও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই আপাতত আমদানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান জানান, ‘আমাদের কাছে প্রায় ৩ হাজার আবেদন এসেছে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কোনো আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) দেওয়া হচ্ছে না। আগস্টে যারা আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু অনুমতি দেওয়া হলেও বাকিগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে অভিযোগ উঠেছে, কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংকের সহায়তায় আইপি ছাড়াই এলসি খুলেছেন। এতে করে বন্দরে আটকে আছে বেশ কিছু পিঁয়াজের চালান। কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করছে, এমন উদ্যোগ বাজারে বিভ্রান্তি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির অংশ হতে পারে। বর্তমানে দেশে পিঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ-দুই ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের উন্নত বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার এবং সংরক্ষণের জন্য ৮ হাজার এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করেছে। তবুও কৃষকদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ রয়ে গেছে। ভোক্তা সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘যখন দেশে উৎপাদন ও মজুত দুই-ই ভালো, তখন আমদানির কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মজুত করে কৃত্রিম সংকট দেখানোর চেষ্টা করছেন। এই চক্রকে থামাতে হলে সরকারের কঠোর নজরদারি জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমদানির অনুমতি খুলে দিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক, আর লাভবান হবে কয়েকজন বড় আমদানিকারক। এটা রোধে স্বচ্ছতা ও নীতির শাসন নিশ্চিত করতে হবে।’