সরকারি চাকরি আইন

পেশাদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত হোক

প্রিন্ট ভার্সন

গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। হাত পড়ে প্রশাসনেও। কারণ দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসনের অনিয়ম-অনাচার, দুর্নীতি-দুঃশাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অনেকেই বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। আচরণবিধিই ভেঙে পড়ার জোগাড় হয়েছিল। আচার-আচরণ-ব্যবহারে জনগণের সেবকরা যেন ‘প্রভু’ হয়ে উঠেছিলেন! এ পরিপ্রেক্ষিতেই গত মে মাসে প্রণীত ও জারি হয় নতুন সরকারি চাকরিবিধি। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনেক হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের আপত্তি আমলে নিয়ে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সরকারি চাকরির দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। মোটা দাগে এতে সরকারের ‘বৈধ আদেশ’ অমান্য করাকে ‘অনানুগত্যের অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিন ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের কথা বলা হয়েছে। অধ্যাদেশে নতুন সংযোজিত ৩৭-এর ক ধারায় এগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে। কারও দ্বারা এসব সংঘটিত হলে তা ‘সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করে দণ্ড দেওয়া যাবে। দোষী সাব্যস্ত কর্মচারীকে নিম্ন পদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনতিকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত-এই তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। শাস্তি নিশ্চিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, থাকবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকবে না। এর আগে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাবে সম্মতি দিলে তার প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সে অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুন আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদন করে, যা বুধবার জারি হলো। আশা করি, এ অধ্যাদেশে নির্দেশিত ‘সরকারি চাকরি আইন’ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নৈতিক, যৌক্তিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদারি নিশ্চিত করবে।