যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম-অধ্যুষিত ১২ দেশের নাগরিকের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ (ট্রাভেল ব্যান) এবং আরও সাত দেশের নাগরিকের জন্য আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৯ জুন থেকে কার্যকর হবে এই নিষেধাজ্ঞা এবং এর আওতামুক্ত থাকবে ওই সব দেশের গ্রিনকার্ডধারী অথবা ইতোমধ্যেই পাওয়া নন-ইমিগ্র্যান্ট/ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারীরা। পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, মিয়ানমার (বার্মা), চাদ, কঙ্গো, গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন। আর আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় দেশগুলো হচ্ছে বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনিজুয়েলা। ৪ জুন ‘ট্রাভেল ব্যান’-এর আদেশ জারিকালে নিজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন, ‘কলোরাডোর বোল্ডার সিটিতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে যথাযথভাবে যাচাইবাছাই না করা এমন কিছু বিদেশি আসছে, যারা আমাদের দেশের জন্য ভয়ংকর রকমের হুমকিস্বরূপ। একইভাবে অস্থায়ী ভিজিট ভিসায় আসার পর যারা ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বেআইনিভাবে অবস্থান করছে তারাও কমিউনিটির জন্য নিরাপদ নন। আমরা কখনোই তাদের দেখতে চাই না।’ তবে উপরিউক্ত ১৯ দেশের নাগরিকের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করবেন বলে মনে করা হবে, তাদের ভিসা অবারিত থাকবে, নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফেরার দিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর শত্রু বিবেচিত বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদকারী ‘বিদেশি শিক্ষার্থী’ ভিসাধারীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
প্রতিদিনই আইসের এজেন্ট এবং রিপাবলিকানশাসিত স্টেটগুলোর নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে অবৈধ অভিবাসী ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিদেশিদের ধরতে এবং গত সাড়ে চার মাসে লক্ষাধিক অভিবাসীকে সরকারি খরচে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। এমনি একটি টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই ১ জুন কলোরাডো স্টেটের বোল্ডার সিটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস কর্তৃক অপহরণের পর গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত ব্যক্তিদের ওপর এক ব্যক্তি ঘরে তৈরি মলোটভ ককটেল (পেট্রোলবোমা) ছুড়ে মারেন। এতে আহত হয় আট ব্যক্তি। বোমা ছোড়া ব্যক্তিটি হচ্ছেন ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাসরত মিসরীয় নাগরিক মোহাম্মদ সাবরি সোলাইমান (৪৫)। এফবিআই তাকে আটক করেছে এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, সাবরি সোলাইমান বোমা ছুড়ে মারার সময় ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’ স্লোগান দিয়েছিলেন। এ ঘটনাটি ট্রাভেল ব্যানের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তাকে ত্বরান্বিত করেছে। যদিও মিসরের নাম নেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উপরিউক্ত তালিকায় আরও দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জারি করা একই ধরনের ট্র্রাভেল ব্যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও চূড়ান্ত রায়ে আদালত ওই নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তিসংগত বলে রায় দিয়েছিলেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাভেল ব্যানকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তাই এবার নতুন কোনো মামলার অবতারণা হবে বলে কেউ মনে করছেন না। আরও উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা দেশগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশক্রমে।
ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার আদেশকে ‘রাজনৈতিক তামাশা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর নেতারা।