বগুড়ায় বিএনপির দুর্গে আবারও নির্বাচনি হাওয়া লেগেছে। হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও জেলার সাতটি সংসদীয় আসন ভোটের মাধ্যমে নিজেদের দখলে আনতে দ্বিগুণ শক্তিশালী সংগঠন নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলটির এ দুর্গে হানা দিতে জামায়াতের প্রার্থীরাও ছুটে চলেছেন ভোটারদের কাছে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের কাছে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। দলীয় নির্দেশনা মেনে ধীরে ধীরে ভোটার বাড়ানোর পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। এদিকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বগুড়া-৭ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার খবরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মুখিয়ে আছেন।
জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করায় আগাম নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে বগুড়ার সংসদীয় সাতটি আসনে। প্রার্থীরা উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে নির্বাচনি মাঠ কাঁপাচ্ছেন। বগুড়ায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী তাদের কর্মীদের নিয়ে মাঠে ধানের শীষের জানান দিচ্ছেন। আর জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ায় তাদের প্রার্থীরাও বসে নেই। কাঠ ফাটা রোদ কিংবা ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া সোনাতলা এলাকার মনি পঞ্চায়েত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও শিল্পপতি মহিদুল ইসলাম রিপন মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন। এ আসনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম টিটু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন। এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীনকে দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বগুড়া জেলা কমিটির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আবার একক প্রার্থী হিসেবে জামায়াত থেকে এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানকে ইতোমধ্যে মনোনীত করা করেছে। অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান এর আগে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম ও জামায়াতের শাহাদাতুজ্জামানের মধ্যে লড়াই হলেও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না তার অতীত রাজনৈতিক ঐতিহ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক জিএস অ্যাডভোকেট হামিদুল হক চৌধুরী হিরু এবার প্রার্থী হবেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা হলেন- বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান খান মুক্তা, আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা নূর মোহাম্মদ আবু তাহের।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে এবার প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মোশারফ হোসেন। এ আসনে জামায়াতের তরফে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইদ্রিস আলী, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের কাজী এম এ কাশেম প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান হারেজ, শেরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আসিফ রব্বানী সানভি, পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুন্ডু ও জানে আলম খোকা। জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী আলহাজ মাওলানা দবিবুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
বগুড়া-৬ (সদর) আসন জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বরাবরই এ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। আর বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী।