উৎসবগুলোতে প্রায়ই খাবারের আয়োজনটা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এ ধরনের উদ্যাপনের সময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি, ভাজা খাবার, উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এবং অনিয়মিত খাবারের সময় গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করতে পারে। নিচে মূল খাদ্য তালিকাগত উদ্বেগ এবং সেগুলো পরিচালনা করার কৌশলগুলো দেওয়া হলো :
১. বেশি চিনি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ
* উদ্বেগ : ঐতিহ্যবাহী উৎসবের খাবারগুলোতে প্রায়ই বেশি পরিমাণে চিনি থাকে (যেমন-মিষ্টি, মিষ্টান্ন, চিনিযুক্ত পানীয়)।
*প্রভাব : রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি এবং ইনসুলিনের চাহিদা বৃদ্ধি।
* কৌশল : চিনিমুক্ত বা কম জিআই (গ্লাইসেমিক সূচক) বিকল্পগুলো বেছে নিন। খাবারের আকার সীমিত করুন।
২. অতিরিক্ত খাওয়া এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ।
* উদ্বেগ : পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। *
প্রভাব : ওজন বৃদ্ধি এবং দুর্বল গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ। *
কৌশল : খাবারের আকার নিয়ন্ত্রণ করতে ছোট প্লেট ব্যবহার করুন। * ধীরে ধীরে এবং সচেতনভাবে খান। * যতটা সম্ভব আপনার নিয়মিত খাওয়ার সময়সূচি মেনে চলুন।
৩. ভাজা এবং চর্বিযুক্ত খাবার।
* উদ্বেগ : উৎসবের সময় ভাজা খাবার সাধারণ।
* প্রভাব : ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা, কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের ঝুঁঁকি বাড়ায়।
* কৌশল : ঐতিহ্যবাহী খাবার বেক করুন বা বাতাসে ভাজুন। * স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ সীমিত করুন। * উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারের ক্ষতিপূরণ দিতে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
৪. অনিয়মিত খাবারের সময়।
* উদ্বেগ : উৎসবের সময় খাবারের সময়সূচি প্রায়ই ব্যাহত হয়। *
প্রভাব : খাবার মিস করা বা অনিয়মিত খাবার খাওয়ার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
* কৌশল : আগে থেকে খাবার পরিকল্পনা করুন। * স্বাস্থ্যকর খাবার (যেমন-বাদাম, ফল বা কম কার্বযুক্ত খাবার) হাতের কাছে রাখুন। * বড় ভোজের আগে খাবার এড়িয়ে যাবেন না, পরিবর্তে, ছোট, সুষম খাবার খান। এ বিষয়ে আরও সচেতন হোন।
৬. ডিহাইড্রেশন।
* উদ্বেগ : বর্ধিত কার্যকলাপ এবং পরিবর্তিত রুটিনের সঙ্গে পানি গ্রহণ হ্রাস পেতে পারে।
* প্রভাব : ডিহাইড্রেশন রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে।
* কৌশল : প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
* চিনিযুক্ত সোডা এবং জুস এড়িয়ে চলুন। * কিছু ক্ষেত্রে ভেষজ চা এবং মিশ্রিত পানি সুস্বাদু এবং হাইড্রেটিং বিকল্প হতে পারে।
৭. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব।
* উদ্বেগ : ভ্রমণ বা উদ্যাপনের রুটিনের কারণে লোকেরা কম সক্রিয় থাকতে পারে।
* প্রভাব : গ্লুকোজ ব্যবহার হ্রাস এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা।
* কৌশল : হালকা শারীরিক কার্যকলাপ করার চেষ্টা করুন। (যেমন-খাবারের পরে হাঁটা)। * পরিবারকে মজাদার চলাচলভিত্তিক ঐতিহ্যে জড়িত করুন।
৮. সামাজিক চাপ এবং মানসিক চাপ।
* উদ্বেগ : আপত্তিকর কাউকে প্রশ্রয় দেওয়ার বা এড়িয়ে চলার চাপ।
* প্রভাব : খারাপ খাবার পছন্দ এবং আবেগগত খাওয়া।
* কৌশল : ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান করুন বা ছোট অংশগ্রহণ করুন। * কেবল খাবারের চেয়ে উৎসবের সামাজিক দিকগুলোতে মনোনিবেশ করুন। * শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা সংক্ষিপ্ত হাঁটার মতো চাপ ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুশীলন করুন।
পরামর্শমালা
* নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং পর্যবেক্ষণ রুটিন মেনে চলুন। * আয়োজনে ডায়াবেটিসবান্ধব খাবার প্রস্তুত করুন বা আনুন। * উৎসবের খাবারের জন্য উপযুক্ত একটি নমনীয় খাবার পরিকল্পনা তৈরি করতে একজন ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করুন।
* পরিবার এবং বন্ধুদের তাদের সমর্থন পেতে খাদ্য তালিকাগত চাহিদা সম্পর্কে অবহিত করুন।
উপসংহার : চিন্তাশীল পরিকল্পনার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভালো গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে উৎসবের মৌসুম উপভোগ করতে পারেন। মূল বিষয় হলো-ভারসাম্য, সংযম, সচেতনতা এবং প্রস্তুতি স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস না করে খাদ্য তালিকাগত প্রলোভন মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে।
-ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা