বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্য খাতসহ সর্বস্তরে। নতুন করে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারও কঠোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সরকারের নির্দেশনায় দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে সাতটি নির্দেশনা।
গত শনিবার থেকেই রাজধানীসহ দেশের সব জেলা হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য আলাদা শয্যা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী শনিবারের মধ্যে সব জেলা হাসপাতালেই নির্ধারিত সংখ্যক শয্যা প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা ও জরুরি সেবার জন্য হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ জন করোনা পজিটিভ। আর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর এ বছরের মে মাসে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। ১ হাজার ৪০৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ কভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ফের চালু হচ্ছে করোনা নমুনা পরীক্ষা। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেসব হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আওতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার কার্যক্রম চালু করা হবে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে। আর এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রামক ও দ্রুত বিস্তার করে। তাই সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। রোগী থাকুক বা না থাকুক, প্রতিটি হাসপাতাল প্রস্তুত থাকবে ইনশা আল্লাহ। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাতটি নির্দেশনা হলো- জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরিধান, হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা বা টিস্যু ব্যবহার, ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলা, সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
এদিকে চট্টগ্রামে গত ছয় দিনে নতুন করে চারজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল এক জরুরি সভায় জানিয়েছেন, নতুন করে দেখা দেওয়া কভিড উপ-ধরনটি ডেল্টার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বিষাক্ত এবং মৃত্যুহার অনেক বেশি। তিনি বলেন, বন্দরনগরীতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আগের মতো সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
স্থল ও বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন যেন বাংলাদেশে না ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য দেশের সব স্থলবন্দর, বিশেষ করে ভারত সীমান্তঘেঁষা বেনাপোল, আখাউড়া, হিলিসহ অন্যান্য পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে স্ক্রিনিং কার্যক্রম। বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক রাগিব সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা আমরা যথাযথভাবে অনুসরণ করছি। বিমানবন্দরে আগে যেমনভাবে প্রতিটি যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানার করা হতো সেটা চালু করেছি। ডিজিটাল থার্মোমিটারে তাপমাত্রা যাচাই করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথেষ্ট মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই মজুত রাখা হয়েছে। রাগিব সামাদ বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। যদি শনাক্ত হয় তাহলে সেই রোগীকে আইসোলেশনে রাখা অথবা হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে তা করা হবে। করোনার ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।
আখাউড়া ইমিগ্রেশনে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী অন্নপর্ণা জানান, ভারতের কিছু এলাকায় জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষায় ওমিক্রণের এক্সবিবি উপ-ধরন শনাক্ত হয়েছে। তাই ভারতফেরত সব যাত্রীকে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে যাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।