ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২১তম আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে হতাশাজনক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদ।
৮২ বছর বয়সী এই আন্তর্জাতিক মাস্টার তার নিয়মিত সফরসঙ্গী আছিয়া সুলতানাকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আছিয়াকে আটকে দেওয়া হয় এবং পরদিন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী আছিয়া সুলতানা নিজেও একজন দাবাড়ু এবং দিল্লি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। তবে পূর্বে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে কলকাতার এক দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ায় ভারতীয় অভিবাসন দপ্তর (FRRO) তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে।
ফলে ইমিগ্রেশনে রাতভর আটকে রাখা হয় আছিয়াকে। পরদিন বাধ্যতামূলকভাবে দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয় তাকে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত রানী হামিদ ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত। যে মেয়েটি আমার সঙ্গে এসেছিল, তাকে ঢুকতেই দেয়নি। পুরো রাত সে ইমিগ্রেশনে বসে ছিল। লাগেজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরদিন তাকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনে দেশে ফিরতে হয়েছে।’
আছিয়া সুলতানাও তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেডিক্যাল ভিসা ছিল। তখন কাশ্মীরে একটি টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় খেলেই ফিরে এসেছিলাম। ইমিগ্রেশনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেও তারা কিছু শুনেনি। ভারতের দাবা সংগঠনের লোকজন সহযোগিতা করলেও কিছুই কাজে আসেনি।'
আছিয়া সুলতানা দেশের দাবা অঙ্গনে নতুন হলেও আন্তর্জাতিক রেটিংধারী খেলোয়াড়। গত কয়েক বছরে নিয়মিত টুর্নামেন্ট খেলছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি রানী হামিদের সঙ্গী হিসেবে শ্রীলঙ্কায়ও খেলেছেন।
এই ঘটনায় দিল্লিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রানী হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো একা ভ্রমণ করি না। বয়স হয়েছে। আছিয়া আমার সফরসঙ্গী ছিল। ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমি একা পড়ে গেছি। খেলায় মনোযোগ দিতে পারছি না।’
রানী হামিদের ছেলে, সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ জানান, ‘মা একা বিদেশে থাকতে পারেন না। আছিয়া তার সঙ্গে কয়েকটি টুর্নামেন্টে ছিল। এখন সে না থাকায় মা অনেক বিপদে পড়েছেন। আমরা খুবই চিন্তিত।’
দিল্লি টুর্নামেন্ট শেষে রানী হামিদের মুম্বাইয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আছিয়ার অনুপস্থিতিতে সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, দিল্লি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টের বিশেষ অতিথি ছিলেন রানী হামিদ। আন্তর্জাতিক দাবা অঙ্গনে তিনি শুধু খেলোয়াড় নন, তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎসও। এই ঘটনার খবর ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক