কাল শুক্রবার সকালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে সব রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছে উভয় পক্ষ। সরকার ও বিএনপি ছাড়াও দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা একটি ফলপ্রসূ বৈঠক। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে আগামীকালের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, এ বৈঠকের মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক সব মতপার্থক্য ও দূরত্ব দূর হবে। আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান হবে এবং যৌক্তিক সময়েই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী কমিটির একাধিক সদস্যের মতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি, প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ এবং জুলাই সনদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই কমে আসতে পারে। বৈঠককে কেন্দ্র করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইতোমধ্যে লন্ডন পৌঁছেছেন। তিনিও বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দলীয় প্রতিনিধিদলে অংশ নিতে পারেন। তবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের মূল বৈঠকটি হবে কার্যত ‘ওয়ান টু ওয়ান’। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে দুজন ছাড়া আর কেউ থাকবেন না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক রাজনীতিতে সুবাতাস আনবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, গোটা জাতি এখন লন্ডনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। যৌক্তিক সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।
আগামীকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টায় লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকের আয়োজন মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, লন্ডন থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ‘ওয়ান টু ওয়ান’ একটি বৈঠকের চেষ্টা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। তিনজন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়া ও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের কর্মসূচি নির্ধারণের পর গত সোমবার মূলত বিএনপির পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয় সরকারের আহ্বানে। ঢাকা ও লন্ডনের সূত্রগুলো জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির দিক থেকেও সাক্ষাৎ ও বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার কারণে বৈঠকটি হতে যাচ্ছে।
গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মতামতের ভিত্তিতেই আগামীকালের এ বৈঠকে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বৈঠকটিকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বড় একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য তারেক রহমানের বৈঠককে এ সময়ের সবচেয়ে বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে আবারও আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে। এক কথায় সম্ভাবনা অনেক। আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি, তাঁর সাফল্য প্রার্থনা করেছি। আশা করছি বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।