ক্রিকেটে ভারত বরাবরই শক্ত অবস্থানে। বিশ্বে এমন কোনো ট্রফি নেই যা তাদের জেতা হয়নি। এক খেলোয়াড় বিদায় নিলেও যোগ্যরাই শূন্যস্থান পূরণ করছেন। ক্রিকেটে ভারত যেভাবে এগোচ্ছে তা অন্যদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ক্রিকেটে বিশ্ব শাসন করছে তারাই। অন্যদিকে ফুটবলে ভিন্ন দৃশ্য। ফুটবলের উন্নয়নে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে ভারত। নিত্যনতুন টুর্নামেন্ট করছে। এর পরও ফুটবলে দেশটির অগ্রগতি নেই। সাফল্য বলতে শুধু সাফই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ তো বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম দুর্বল টুর্নামেন্ট। যেখানে বিশ্ব ফুটবলে নিচের সারির দেশগুলো খেলে থাকে। এভাবে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
হতাশার মধ্যে ভারতের বড় সান্ত্বনা ছিল ফুটবলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পেরে না ওঠা। জয়ের পাল্লা যেমন ভারী তেমন ফিফা র্যাংকিংয়েও বেশ এগিয়ে। তাদের ধারণা ছিল ক্রিকেট ও হকির মতো ফুটবলেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চিন্তা পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে ভারত এখন রীতিমতো আতঙ্কে।
তবে তা পারফরম্যান্সে নয়। বাংলাদেশের ফুটবলে একে একে প্রবাসীর আগমনে চোখে শর্ষে ফুল দেখছে ভারত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আগমনের পরই ভারতের সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। অথচ হামজার খেলা নিয়ে যখন কথা চলছিল তখন ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছিল, হামজার খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই ফুটবলে তলানির দেশ বাংলাদেশে খেলতে আসবে।
সেই হামজাই ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়া কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেললেন। ম্যাচ ড্র হলেও এক হামজাই ছিলেন একা এক শ। হারা ম্যাচ ড্র করে কোনোক্রমে মান বাঁচিয়েছিল তারা। এক হামজাকে দেখেই ভারত ভয় পেয়ে বসেছিল। এখন কানাডা জাতীয় দলে খেলা সামিত সোম, ইতালিতে খেলা ফাহামিদুল ইসলামও বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামলেন। ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডে খেলা কিউবা মিচেলও বাংলাদেশে খেলার অনুমতি পেয়ে গেছেন। সম্ভবত হংকংয়ের বিপক্ষেই তাঁর অভিষেক হবে। এরপর তো আরও কজন অপেক্ষায় রয়েছেন।
হামজাদের নিয়েও বাংলাদেশ হেরে গেছে সিঙ্গাপুরের কাছে। এতেও আতঙ্কিত ভারত। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তো ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু নেতিবাচক কথাবার্তা। অথচ বাংলাদেশের ফুটবল ঘিরে প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা। ভারতীয়দের কথা-প্রবাসীদের এনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ফুটবলের শক্তিশালী দরবারে পৌঁছে যাবে। ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া এখন ফুটবল কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবাজ বলেও তিরস্কার করছে। প্রচুর অর্থ ব্যয়ের পরও ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের কোনো লক্ষণ নেই। নেই নতুন ফুটবলারের সন্ধান। অবসর নেওয়ার পর ৪০ বছর বয়স্ক সুনীল ছেত্রীকে খেলানো হচ্ছে। এই হচ্ছে ফুটবল উন্নয়নের নমুনা।
ভারতের সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ যা পারবে তারা তা পারবে না। কেননা, তাদের সংবিধানে আছে-দুই দেশের নাগরিক হতে পারবেন না। বাবা-মায়ের জন্ম ভারতে হলেও তারা বিদেশের নাগরিক হওয়ায় তাদের সন্তানরা প্রবাসী হিসেবেও খেলতে পারবেন না। ভয়তো এখানেই। তাহলে কি বাংলাদেশ অচিরেই এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলে পরিণত হবে? কী হবে তা এখনই বলা যাবে না। অথচ হামজা-সামিতদের আগমনে ভারতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারপর আবার একসময় র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা জর্ডান ও উজবেকিস্তান প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। কোনো সোশ্যাল মিডিয়া নয়, কলকাতার এক প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া এ নিয়ে আতঙ্কিত। তারা লিখেছে, ফ্রান্সও কিন্তু ভিনদেশিদের নাগরিকত্ব দিয়ে ফুটবলের শক্তি বাড়িয়েছে। কে জানে একসময় বাংলাদেশও ফ্রান্সের রূপ ধারণ করতে পারে।