গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালুর স্বপ্নে ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দুটি ফেরিঘাট টার্মিনাল। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চারটি লঞ্চ দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়। কয়েকদিন পরই নাব্যসংকটে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ। এরপর তিন বছর কেটে গেলেও ফেরি বা লঞ্চ সার্ভিসই চালু হয়নি। অব্যবহৃত পড়ে আছে আধুনিক টার্মিনাল দুটি।
১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ও বাহাদুরাবাদ ঘাট চালু হয়। এ দুই ঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৯০ সালে নদীর নাব্যসংকটের অজুহাতে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার উজানে বালাসীতে। নতুন করে সেখানে ব্যয় করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নির্মাণ হয় ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ। কয়েক বছর চলার পর ব্রহ্মপুত্রে নাব্য হ্রাসের কারণে সেখানে ফেরি বন্ধ হয়ে যায়। যমুনা বহুমুখী সেতু চালুর পর ২০০০ সাল থেকে এ রুটে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়।
যমুনা সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে ২০১৪ সালে বিকল্প নৌরুট তৈরির যুক্তি দেখিয়ে বালাসী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকের সভায় অনুমোদন হয় প্রকল্প। ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। দুই দফায় ব্যয় বাড়িয়ে দাঁড়ায় ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নদীর মরফোলজিক্যাল অবস্থা না জেনেই দুই পাড়ে করা হয় ঘাট। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় এ নৌপথ। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর উত্তরের আট জেলার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন আবার সচল হবে পুরোনো নৌপথ, সহজ হবে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ। তিন বছরেও ফেরি চালু না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা। ?গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান মিলন বলেন, এটি পরিকল্পনার স্পষ্ট ব্যর্থতা। যদি ফেরি চালানোই না যায়, তবে প্রকল্প নেওয়ার মানে কী? সম্প্রতি বালাসীঘাটের নৌ-টার্মিনালে আসেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। তিনি বলেন, নদীর নাব্যসংকটের কারণে ফেরি বা লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়। বিকল্প ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে সরকার। ?আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ছোট প্রকল্প হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা যায়নি। বাহাদুরাবাদ ঘাটকে আমরা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছি। তেমনি বালাসীঘাটে হবে ইকোপার্ক ও হাইড্রোলজি অফিস ভাবছে বিআইডব্লিউটিএ। সচেতন মহলের প্রশ্ন, নদীর নাব্যসংকট আগে থেকেই। তবে কেন ফেরিঘাট নির্মাণে ১৪৫ কোটি টাকা খরচ হলো। উত্তরাঞ্চলের মানুষ এখনো অপেক্ষায়, হয়তো আবার কোনো দিন ব্রহ্মপুত্রে চলবে ফেরি।