মাদকবিরোধী অভিযানের নামে দক্ষিণ আমেরিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে এ অভিযান শুরু হতে পারে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। এদিকে, ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে দেখা যাচ্ছে এক অভিনব দৃশ্য। বয়স্ক নাগরিক ও সাধারণ মানুষরা অস্ত্র হাতে খোলা রাস্তায় নিচ্ছেন প্রশিক্ষণ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী মোতায়েন ও তাদের হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হওয়ার পর একে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো। এরপরই বয়স্ক নাগরিক ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে গঠিত ‘ন্যাশনাল বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’- বাহিনীকে আবার সক্রিয় করেছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
শহরের ২৩ দে এনরো এলাকায় বসবাসকারী ৬৮ বছরের এডিথ পেরালেসও আবার প্রস্তুত হচ্ছেন সামরিক পোশাকে রাস্তায় নামতে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের আহ্বানে ২০০৯ সালে গঠিত এই বাহিনীটিতে তরুণ বয়সে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পেরালেসের ভাষায়, ‘আমাদের মাতৃভূমি রক্ষা করতে হবে। ডাক এলেই আমি রাস্তায় নামব।
রাজধানীর পেতারে এলাকাজুড়ে শনিবার দুপুরে ‘জনগণের কাছে ব্যারাক্স’ নামে সামরিক মহড়া চলে। রাশিয়ার নির্মিত ট্যাংক, পোস্টার, লোড না করা রাইফেল নিয়ে স্থানীয়দের অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ দেন সেনারা। নারী, পুরুষ, এমনকি শিশু পর্যন্ত ভিড় জমায় মহড়ায়। ৬৯ বছরের ফ্রান্সিসকো ওহেদা গরম রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যুদ্ধের ভঙ্গিতে শুয়ে ছিলেন। হাতে ধরা একে-১০৩ রাইফেল। উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রয়োজনে প্রাণ দেব। এমনকি বিড়ালগুলোও বেরিয়ে আসবে মাতৃভূমি রক্ষায়।’ ৬৭ বছরের গ্লাদি রদ্রিগেজের অঙ্গীকার, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রাসন মেনে নেব না।’
আন্দ্রেস বেলো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেনিগনো আলারকন মনে করেন, মিলিশিয়ার উদ্দেশ্য সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা। এতে সম্ভাব্য যুদ্ধে বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি বাড়বে, যা মার্কিন বাহিনীকে চাপে ফেলতে পারে। মাদুরোর দাবি, ৮২ লাখের বেশি মানুষ মিলিশিয়া ও রিজার্ভে আছেন। তবে এ সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শুক্রবার দেওয়া এক ভাষণে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল পিন্টো যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনাকে ‘অবৈধ ও সম্পূর্ণ অনৈতিক সামরিক হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমাদের মাথার ওপর যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ছায়া নেমে এসেছে, তার বিরুদ্ধে কারাকাস দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেন তিনি। সূত্র : এনবিসি নিউজ, বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/এএম