রাজধানীর আজিমপুর দায়রা শরিফ এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। গতকাল একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর আজিমপুর ক্যাম্প-৪৬ ব্রিগেড (অজেয় চার) ও লালবাগ থানা পুলিশ। এ সময় বাড়িটির আন্ডারগ্রাউন্ডের গোপন কক্ষে পার্কিং করে রাখা কয়েক কোটি টাকার ছয়টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, ১২তলা বিশিষ্ট গুলশানারা মাসুদা টাওয়ারের নিচতলায় বিশেষভাবে টিনশেড দিয়ে ঘেরা একটি আলাদা রুম তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে কয়েক কোটি টাকা দামের গাড়িগুলো লুকিয়ে রাখা হয়। দুপুরের দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখে। এরপর আন্ডারগ্রাউন্ডে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় আন্ডারগ্রাউন্ডের টিনশেড কক্ষে ছয়টি গাড়ি দেখতে পায় যৌথবাহিনী। গাড়িগুলোর কাভার খুলে এবং ভিতরে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় সংসদ সদস্য লেখা একটি লোগো পাওয়া গেলেও গাড়িগুলোর বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
অভিযানের সময় গাড়িগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র ভবনের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার দেখাতে পারেননি। এমনকি কেন আলাদা রুমে টিনশেড দিয়ে গাড়িগুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়েও তিনি কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন। উদ্ধার হওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুটি বিএমডব্লিউ, যার একটি সাদা ও অন্যটি লাল রঙের। এ ছাড়া একটি কালো রঙের নিশান পেট্রোল, একটি সাদা প্রোটন প্রাইভেট কার, একটি সাদা টয়োটা আইএসটি এবং একটি লাল রঙের টয়োটা রাস জিপগাড়ি।
যৌথবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা এ অভিযান চালান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার হওয়া এসব বিলাসবহুল গাড়ি সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা হাজী সেলিম ব্যবহার করতেন। তবে গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযান শেষে গাড়িগুলো জব্দ করা হয় এবং ভবনের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজিমপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল খান বলেন, ডিএমপির একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ছয়টি গাড়ির আনুমানিক দাম ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের সাদা গাড়িটি হাজী সেলিমের। একটি তার ডেভেলপার কোম্পানি মদিনা ট্রেডিং করপোরেশনের নামে। বাকি একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং দুই ব্যক্তির নামে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হাজী সেলিম এবং তার বড় ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তার আরেক ছেলে ইরফান সেলিম পলাতক রয়েছেন।