পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী, উদ্ভিদ, জীব এবং অণুজীব সবার জন্য প্রশান্তি প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশান্তি খাদ্যের চেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং উপাদেয়। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO)-এর World Tourism Barometer (সেপ্টেম্বর, ২০২৫) অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বে ১.৩ বিলিয়ন মানুষ ভ্রমণ করেছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণকে মানসিক স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও আত্ম-উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখেছে। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি মানুষের গভীর চাহিদার প্রতিফলন-প্রশান্তি, ভালো লাগা, আত্মিক পুনর্জাগরণ। এই চাহিদা কোনো জাতি, ধর্ম, বয়স, শ্রেণি দেখে না- এটি সবার।
মানুষ নামক সেরা প্রাণীর মস্তিষ্কে সেরোটোনিন জাতীয় হরমোনগুলোর সৃষ্টি হয় বিনোদন থেকে, ভালো লাগা থেকে। সেরোটোনিন নামক অতি মূল্যবান মাইক্রো হরমোনের উৎপত্তির জন্য সুষম খাদ্য নয়, প্রয়োজন প্রশান্তি ও হাস্যোজ্জ্বলতা। তাই ১৯৬৪ সালে টিএমএসএসের ভিশন নির্ধারণ হয়েছিল ‘হাস্যোজ্জ্বল নারী সমাজ’ যা বর্তমানে বহাল আছে। কিন্তু মায়ের জাতি নারী পরিবারকে বাদ দিয়ে, পরিবারকে না নিয়ে একা হাস্যোজ্জ্বল হয় না। এজন্যই টিএমএসএসের স্লোগান ‘পরিবারই হোক নারী উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল’। এই দর্শনের বাস্তব রূপ দেখা যায় উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার টিএমএসএস বিনোদন জগতে।
প্রাচীন ঐতিহাসিক পুণ্ড্রনগর বর্তমান হিমালয়বিধৌত করতোয়া নদীর আঁকাবাঁকা প্রবহমানতার উভয় পাশে সক্রিয় নির্মাণাধীন নয়টি মৌজায় সাতটি পার্কের সমন্বয়ে টিএমএসএস বিনোদন জগৎ। টিএমএসএস বিনোদন জগৎ একটি স্বতন্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম, যা লাভের জন্য নয়। টিএমএসএস জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের আর্থসামাজিক ও অবস্থানের উন্নয়নসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় টিএমএসএস বিনোদন জগতের সৃষ্টি, যা পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন-এর সঙ্গে লাগোয়া। টিএমএসএস বিনোদন জগতের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা, আনন্দঘন পরিবেশ এবং কর্মকৌশলে বিষণ্ন ও অবসাদগ্রস্ত মানুষকেও উদ্যমী, উৎসাহী, দক্ষ করে তোলার অনুশীলন থাকবে। যা এ এলাকার ফুসফুস হিসেবে পরিচিতি পাবে।
টিএমএসএস বিনোদন জগতে এসে স্থলপথ, জলপথ, আকাশপথ, নদী, খাল, পুকুর, বনজঙ্গল, সমতল, পাহাড়, পর্বত নানা ধরনের ইকোলজিক্যাল প্রাকৃতিক আমেজ, ব্যবসাবাণিজ্য, বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর রাইড, স্পিডবোট, নৌকা, দোলনা, গলফ্ কার, বাউন্সিং ক্যাসেল, জাম্পিং, পেয়ার সেলফি মঞ্চ ইত্যাদিসহ রংবেরঙের সুস্বাদু খাদ্য উপভোগ এবং ন্যায্যমূল্যে বিপণন সুবিধাসহ সুবিশাল খেলার মাঠে খেলাধুলার সুব্যবস্থা আছে। উত্তম যোগাযোগ সুবিধাযুক্ত বগুড়া শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে এবং পৌরাণিক/প্রাচীন সভ্যতার নগর পুণ্ড্রবর্ধন মহাস্থানগড় থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে মম ইন পাঁচ তারকা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসংলগ্ন এই বিনোদনযুক্ত উন্নয়ন পার্কের নির্মাণশৈলী দেখাসহ বিনোদনযুক্ত প্রায় ২৪টি স্পটে বনভোজন করার সুযোগ আছে।
বিনোদন করবেন কেন?
আদি মানব হজরত আদম (আ.)-কে মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর ফেরেশতাগণের আপত্তির পরও অতি শখে সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করার মধ্যে তাঁর প্রশান্তি, ভালো লাগাবোধ অস্বীকার করা যায় না। তেমনি বেহেশতে আদম (আ.)-এর প্রশান্তির জায়গা থেকে বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাবা আদম (আ.) এবং মা হাওয়া প্রশান্তি, কল্যাণ ও ভালো লাগার চেতনা থেকে গন্ধম ফল খেয়ে দুনিয়াতে না এলে আজ এই জ্ঞানবিজ্ঞানসমৃদ্ধ সুন্দর দুনিয়া হতো না। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা তাঁর সেরা সৃষ্টির মাধ্যমে এই বর্ণাঢ্য বিজ্ঞানময় দুনিয়ায় সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। তাই উদ্ভাবকগণ সৃষ্টিকর্তার প্রিয় মানুষ।
মানুষসহ সব জীব ও উদ্ভিদের ভালো লাগা থেকেই জীবজগতের জন্ম, প্রতিপালন, পরিণত ও জীবন অবসান চক্র প্রবহমান হয়ে আসছে। ভালো লাগা, প্রশান্তি, বিনোদন নামক মহামূল্যবান ব্যাপারটি না থাকলে মা-পাখি তার ছানাকে খাওয়ানোর জন্য দূরদূরান্ত থেকে নিজে না খেয়ে বহন করে খাদ্য আনত না। সন্তানসন্ততির জন্য পিতা-মাতা না খেয়ে না পরে সন্তানকে খাওয়া-পরা করাতেন না। তাই প্রেমপ্রীতি, ভালো লাগা, ভালোবাসা মহামূল্যবান শক্তি ও সম্পদ; যা মনের বা আত্মার খোরাক। মন বা আত্মা না বাঁচলে আত্মার স্বাস্থ্য ভালো না হলে তারা কুপথে যাবে, সন্ত্রাসী হবে, মাস্তানি করবে, নেশাখোর হবে। ফলে মন ও দেহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রোগব্যাধি বাড়বে। অণুজীব, করোনা, কলেরা, ডেঙ্গু ইত্যাদি ভাইরাস তাদের ভালো লাগা থেকে দুর্বল দেহ-মন বিশিষ্ট মানুষকে আক্রমণ করবে।
মনের খোরাক ছাড়া পেটের খোরাক মূল্যহীন। পেটের খোরাকের অভাবে আত্মহত্যার নজির নেই বললেই চলে। কিন্তু মনের খোরাকজনিত কারণেই আত্মহত্যা, অঘটন এবং শান্তি বিঘ্নতার ব্যাপকতা অনেক বেশি। সব প্রাপ্তির মূল ও মুখ্য প্রাপ্তি মহামূল্যবান শান্তি, প্রশান্তি, বিনোদন। বিনোদনে রোগবালাই দূর হয়, আয়ুষ্কাল বাড়ে, চিকিৎসা ব্যয় কমে। পারিবারিক ঐক্য-অর্জন এবং সাংসারিক স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্পদ বাড়ে। এতে ভালো লাগা, জ্ঞানবুদ্ধি, বিবেক-বিকাশ পায়; দ্বন্দ্ব-কলহ, মামলা-মোকদ্দমা, বিভেদ, বিদ্বেষ হ্রাস পায়।
আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্ট মম ইন পার্শ্বস্থ টিএমএসএস বিনোদন জগতে সন্তানসন্তুতিসহ পরিবার, আত্মীয়স্বজন নিয়ে বিনোদন করতে; ইকো পরিবেশে সবান্ধবে নির্মল বাতাস, হিমালয়বিধৌত করতোয়া নদীতে স্পিডবোট, নৌকা বিহারসহ সামাজিক পরিবেশে মুখরোচক খাবার ক্রয়বিক্রয়, ব্যবসাবাণিজ্য, বিনোদন, উন্নয়ন শিক্ষা সবকিছুই অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এই উত্তম ইবাদত করার জন্য ভ্রমণ নামক সুন্নত দ্বারা দৃশ্যমানতায় বিশ্বাস কৌশলে ভালো থাকা যায়, সুখী হওয়া যায়। পাঁচটি মৌলিক চাহিদার সমমানে নিয়মিত ভ্রমণ, পরিদশর্ন করে বিনোদনের সঙ্গে জ্ঞান অর্জন ও উপভোগ করা প্রয়োজন।
উত্তরবঙ্গে আপনার ভ্রমণের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হতে পারে এখানকার বিনোদন জগৎ। যেখানে আছে- বালা লখিন্দরের প্রাণ পাওয়া ঘাট (মিথ আছে বেহুলা সুন্দরীর স্বামী বালা লখিন্দর গোকুল মেধ-এ পাথরের ঘরে সাপ ঢুকে দংশনে মারা গেলে ভেলায় ভেসে এসে বিনোদন জগতের তথ্য অফিসের পেছনে করতোয়া নদীতে পুনর্জীবিত হন); ব্রিটিশ আমলের জমিদার কামিনী মোহন স্যান্নালের একমাত্র কন্যা, ভারতবর্ষের কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক শিল্পী কাননবালার পছন্দের গোসলের ঘাট যা কাননবালা ঘাট হিসেবে পরিচিত; শিলাদেবীর দমঘাট (পুণ্ড্রনগর বর্তমান মহাস্থানে যুদ্ধ হয়ে রাজা পরশুরামের একমাত্র ভগ্নী শিলাদেবী মহাস্থান জাদুঘরের দক্ষিণ পাশে করতোয়া নদীতে সাঁতার দিয়ে বিনোদন জগতের করতোয়া নদীতে এসে বিশ্রাম/দম নিয়েছিলেন। তাই ঐ স্থানকে শিলাদেবীর দমঘাট বলা হয়। সনাতন ধর্মের মানুষেরা এই ঘাটে স্নান করে পুণ্য অর্জন, বিপদমুক্ত, রোগমুক্ত হবেন বিশ্বাসে গোসল করেন, স্বস্তিবোধ করেন, শিলাদেবীর ফুলবাড়ীর জামির তলায় তার লাশ পাওয়া যায়, যেখানে বর্তমানে মেলা হয়); পাঁঠাকাটা চত্বর সনাতন ধর্মের মানুষ তাদের বিপদ-আপদ, রোগমুক্তির মনস্কামনা পূরণের জন্য পাঁঠাকাটায় এসে পাঁঠা বলি দিয়ে থাকেন। অথবা ঈশ্বর বা আল্লাহ মিয়া নামে পাঁঠা অবমুক্ত করে থাকেন; কামিনী কুঠির, আজব বাড়ির আদিম গুহা, ইকো পরিবেশে প্রাকৃতিক খাদ্যভোগসহ অতি নগণ্যমূল্যে আবাসন ও খাওয়ার ব্যবস্থা। বিনোদন জগতের নির্মল পরিবেশে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাঝে ঘোরাফেরা, আড্ডা জমানো, গানবাজনা, হইহুল্লোড়করণ, বনভোজনসহ নির্মল আনন্দ উপভোগের সুযোগ।
অ্যাগ্রো টুরিজম হিসেবে টিস্যু কালচার ল্যাবে বিশেষ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার, গ্রিন হাউসে নিরাপদ উৎপাদন অবলোকন; উত্তরবঙ্গের কিংবদন্তি ড. এনামুল হক আর্ট অ্যান্ড কালচারাল একাডেমিতে বহুমুখী বহুবিধ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং আর্ট অ্যান্ড কালচারাল শিক্ষা, অনুশীলন; জীবনের কর্মোদ্যম এবং মনোবল বৃদ্ধির জন্য সব উপাদান বিনোদন জগতের সাতটি পার্কে আছে; মম ইন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের লেক অ্যাভিনিউয়ে বিশুদ্ধ রকমারি মার্কেটিং করার সুযোগ আছে; সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যসামগ্রী, আসবাব সুলভ মূল্যে ক্রয়সুবিধা আছে; বিস্তীর্ণ জগৎ এলাকায় কার্পেটিং, ধুলাবালিমুক্ত অতি পরিচ্ছন্ন রাস্তায় চলাচলের জন্য গলফ কার আছে; সুলভ মূল্যে হেলিকপ্টারে আকাশভ্রমণ সুবিধা আছে। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার টিএমএসএস বিনোদন জগতে ইতিহাস, প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানবিকতা একসঙ্গে মিশে গেছে। যেখানে দেখা, জানা, অনুভব করা- সবই একসঙ্গে ঘটে। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ শুধু পথ নয়, প্রতিফলন। প্রতিটি মুহূর্ত শুধু সময় নয়, আত্মার আলোকছায়া। এই যাত্রা হোক নিজের সঙ্গে, প্রকৃতির মাঝে, মানুষের সঙ্গে সংযোগে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, টিএমএসএস (অশোকা ফেলো, পিএইচএফ অ্যান্ড একেএস)