জনদুর্ভোগ লাঘবে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় যমুনা নদীর ক্যানেলের ওপর সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছর আগে নির্মাণ করা হয় ৭২ মিটার দীর্ঘ সেতু। তবে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় এটি স্থানীয়দের কোনো কাজেই আসছে না। ফলে বেলকুচি উপজেলার চরদেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বক্কার প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত এ ব্রিজ নির্মাণের পরও দুর্ভোগ একটুও কমেনি।
স্থানীয়রা জানায়, এ ব্রিজের জন্য দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের দেলুয়া, চর দেলুয়া, মধ্যদেলুয়া, রতনকান্দি, সোহাগপুর, বড়ধুলসহ অন্তত ১০ গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যমুনার ক্যানেলটি পারাপার হতে বর্ষাকালে নৌকা, পানি কমলে বাঁশের সাঁকো ভরসা ছিল এসব মানুষের। এখন সেতু নির্মাণের পরও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আগের মতোই। বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অসুস্থ, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে। এলাকাবাসীর কৃষিপণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় ও টাকা অপচয় হয়। স্থানীয় তাঁত শ্রমিক শাহীন আহমেদ বলেন, চার বছর ধরে ব্রিজ এ অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের বের হওয়ার রাস্তাঘাট নেই। আবদুর রশিদ বলেন, সড়কটা হলেই হাজার হাজার মানুষের চলাচলে সুবিধা হবে। এখানে যাদের জমি পড়েছে ক্ষতিপূরণ দিলেই তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। এর জন্যই রাস্তাটি আটকে আছে।
পথচারী সালেহা বেগম বলেন, রাস্তাই যদি না থাকে তাহলে ব্রিজ দিয়ে কী হবে? চার বছর ধরে মই দিয়ে সেতুতে উঠছি। শিক্ষক আবদুল আলীম বলেন, এলাকার মানুষ মাটি ফেলে হাঁটার রাস্তা তৈরি করেছে। কিন্তু সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ঝালমুড়ি বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, পানির দিনে আমাদের যাওয়ার অসুবিধা। কেউ মারা গেলে নৌকা ছাড়া লাশ কবরস্থানে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। রাস্তা না থাকায় ব্রিজ কোনো কাজে আসছে না। বেলকুচি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে যমুনা নদীর ক্যানেলের ওপর চরদেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-বক্কার প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৬ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গাডার সেতু নির্মাণ শুরু হয়। এটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মঈনুদ্দিন বাশি লিমিটেড। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেতুটির মূল কাঠামো নির্মাণ হয়। এরপর চার বছরেও সেতুটির অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ হয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ না করায় অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে পারছে না এলজিইডি। উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, দেলুয়া ব্রিজটি স্ট্রাকচারাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোডটা ঠিকাদারের কন্ট্রাক্টে ধরা ছিল। ঠিকাদার কাজ শুরু করার পরে আশপাশের যেসব স্থাপনা বা জমি রয়েছে তারা বাধা দেয়। যে কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। পরে জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষের দিকে। এটি শেষ হলে বাকি কাজ ঠিকাদার করে দেবে।