চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র। আর এই বন্দরেই প্রায় দুই দশক ধরে অপরিসীম প্রভাববিস্তার করে আসছেন এনামুল করিম। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের পরিচালক। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে একই বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে গড়ে তুলেছেন এক অপ্রকাশিত সাম্রাজ্য। তার বিরুদ্ধে উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ।
জানা গেছে, এনামুল করিমের বিরুদ্ধে প্রায় ৯ বছর আগের একটি আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। মেসার্স ইউনিবেঙ্গল কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামের একটি শিপিং এজেন্টের রিভলভিং হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও এনামুল করিম, যিনি তখন টার্মিনাল ম্যানেজার ছিলেন, রেগুলেশন লঙ্ঘন করে তাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেন। এর ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আদায়ে সংকটে পড়ে। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় চট্টগ্রাম বন্দর সচিবের কাছে এনামুল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক শিপিং এজেন্টের যোগসাজশে বিধি লঙ্গন করে বন্দরের পাওনা মাসুলের ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অংটি চৌধুরী। উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। ১৭ এপ্রিলের মধ্যে এসব রেকর্ডপত্র সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল দুদকের চিঠিতে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কাগজপত্র এরই মধ্যে জমাও দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী জানান, দুদকের চাওয়া কাগজপত্র বন্দরের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে এখন জিজ্ঞাসাবদ ও অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হবে। এদিকে ২ আগস্ট ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এনামুল করিমের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। নির্ঝর দাবি করেন, এনামুল করিম প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। এই অর্থ তিনি আমেরিকা ও দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তার আমেরিকায় বাড়ি ও বেনামে দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। নির্ঝরের দাবি, এনামুল করিম তার মায়ের সঙ্গে আ স ম আবদুর রবের সুসম্পর্কের সুবাদে ১৯৯৬ সালে নৌপরিবহনমন্ত্রী থাকাকালে চাকরি পান। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিজেকে কখনো আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠজন, আবার বর্তমানে জামায়াত-বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন। জাওয়াদ নির্ঝর আরও অভিযোগ করেন, বন্দরে সব শ্রমিক নিয়োগের নেপথ্যে এনামুল কাজ করেন এবং প্রতিটি নিয়োগ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসেবে বন্দর শ্রমিক কর্মচারী লীগের কয়েকজন কাজ করেন বলে অভিযোগ করেন জাওয়াদ নির্ঝর। এসব অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে এনামুল করিমের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।