বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপির বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলায় জানে আলম অপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। তবে শুনানি চলাকালে আসামি অপু বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। আমরা কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না।’
অপুকে গতকাল বিকেল ৩টায় আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, ‘আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তাঁরা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে এই মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেন।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের এ রকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী আরো কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা দাবি করেছেন মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামি ও তাঁদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পরে বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে অপুকে কাঠগড়ার নেওয়ার জন্য হাজতখানা থেকে বের করা হয়। তাঁর মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুভ জ্যাকেট ও হাতে হাতকড়া ছিল। পরে তাঁকে লিফটে করে আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। তখন তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন। পরে তাঁর উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সাজিদুল ইসলাম রুবেল ও শাহ আলম অভি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। আসামি অপু বিচারকের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনার আইনজীবীরা যা বললেন তার সঙ্গে কি আপনি একমত, নাকি এর বাইরে কিছু বলার আছে?’ তখন আসামি অপু বলেন, ‘আরো বলতে চাই। তখন আসামি অপু বলতে থাকেন, এই মামলায় অলরেডি পাঁচজন গ্রেপ্তার আছে। তাঁদের মধ্যে রিয়াদ বাদে বাকি চারজন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না। আমিও জড়িত নই। রিয়াদ বিপদে পড়েছিল বলে আমাদের তখন ডেকেছিল। রিয়াদ বলেছিল, তোরা দ্রুত আয়। আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমরা সবাই গিয়ে ফেঁসে গেছি।’
অপু বলেন, ‘ঘটনার দিন ২৬ জুলাই রাতে আমরা তার ডাকে গুলশানের ওই বাসায় যাই। যখন শুনি চাঁদাবাজির ঘটনা, তখনই আমি চলে আসি। এর আগে রিয়াদ যে চাঁদাবাজি করেছে, তার কিছুই জানতাম না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লোকেশন ট্র্যাকিং করে দেখেন। আমরা কোথায় ছিলাম, আমাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হবে? রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। রিয়াদ বাদে বাকি চারজন নাবালক। তাদের রিমান্ডে নিয়ে উল্টাপাল্টা স্বীকারোক্তি নেবে। আমাকেও এ জন্য রিমান্ডে নিতে চায়।’
গতকাল শুনানি শেষে আদালত আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর ওয়ারী থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ মামলায় গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পুলিশ জানায়, রিমান্ড শেষে আজ রিয়াদসহ চারজনকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। গত ২৬ জুলাই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম