চট্টগ্রাম ওয়াসা কয়েক বছর ধরেই প্রচার করে আসছে নগরের ৯০ শতাংশ এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটেও বলা হয়েছে গ্রাহকের ৯০ শতাংশই ওয়াসার পানি পাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পানির দাবিতে গ্রাহকরা ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। ফলে ওয়াসা নামেই ৯০ শতাংশ এলাকায় পানি সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। বাস্তবে নগরের অনেক এলাকায় এখনো পানি পৌঁছে না।
জানা যায়, গত ১৫ বছরে ওয়াসা নগরের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১০ প্রকল্পের বিপরীতে ১৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। ওয়াসা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান। শেষ হওয়া আট প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা এবং চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এতগুলো প্রকল্প নিলেও নগরের পানিসংকট কাটেনি। পানি নিয়ে ভোগান্তি প্রসঙ্গে ডবলমুরিং এলাকার বাসিন্দা মো. আলী সর্দার বলেন, ‘অনেক এলাকায় পানিতে সয়লাব হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের এলাকায় পানির জন্য হাহাকার পড়ে। আমরা বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, নিয়মিত পানি চাই। ওয়াসা বাস্তবে ৯০ শতাংশ এলাকায় পানি সরবরাহ করছে না।’
তবে সংস্থাটি বলছে, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীতে পানির শতভাগ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। অথচ ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি গত বছরের জুনে শেষ হয়েছে। এরপরও ৯০ শতাংশ মানুষ পানির আওতায় আসেনি। বর্তমানে নগরে দৈনিক পানির চাহিদা ৫৮ কোটি লিটার। ওয়াসা দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার।
এদিকে জানা যায়, বর্তমানে নগরে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক আছেন ৭৮ হাজার ৫৪২ জন এবং বাণিজ্যিক গ্রাহক ৭ হাজার ৭৬৭ জন। নগরে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ওয়াসা বর্তমানে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা আছে ৫৮ কোটি লিটার। কিছু এলাকায় রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করা হয়।
সঙ্গে আছে গভীর নলকূপ। কিছুটা ঘাটতি থাকলেও আমরা চেষ্টা করি রেশনিং পদ্ধতিতে সব গ্রাহকের কাছে পানি পৌঁছাতে।’
তিনি বলেন, গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। আবার কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তরও নেমে গেছে। ফলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। কেন্দ্রটিতে একটি ইউনিট চালু থাকায় পানি কম ছাড়া হচ্ছে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যায়।