অন্তর্বর্তী সরকারের সংবেদনশীল পদে দায়িত্ব পালন করায় অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন হারানোর শঙ্কা করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ইতোমধ্যে প্রেস সচিবের স্ত্রীও তাকে সতর্ক করেছেন যে, বর্তমান পদ ছাড়ার পর তিনি একা হয়ে যাবেন। নিকটাত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবরা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ শঙ্কার কথা জানান।
ফেসবুকে শফিকুল আলম লেখেন, ‘স্বৈরশাসনের সময় আমি প্রায়ই বিরোধী নেতাদের বিষয়ে লিখতাম, যারা ওই শাসনের বিরোধী ছিলেন এবং যারা জাতির আশার আলো হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের আত্মীয়স্বজনরা প্রায়ই আমার সেই পোস্টগুলো শেয়ার দিতেন। মাঝে মাঝে আমার লেখা এবং সাংবাদিকতার প্রশংসা করে তারা আমাকে বার্তাও পাঠাতেন। এখন আমি যখন অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সংবেদনশীল পদে দায়িত্ব পালন করছি, দেখলাম ওই ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে আনফ্রেন্ড করেছেন। আমি আর আগের আমি নেই। কারও কারও কাছে আমি অহংকারী হয়ে উঠেছি। কারও কাছে ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু একজন প্রেস কর্মকর্তা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এ মুহূর্তে এসে আমার সাংবাদিকতার পুরো সময়টুকুতে তৈরি হওয়া অনেক ফেসবুক বন্ধুকে হারানোর ভয় জাগছে। আমার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে ইতোমধ্যে অনেক আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আমার স্ত্রী সতর্ক করেছে, এই পদ ছাড়ার পর আমি একা হয়ে যাব। কিন্তু এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস কিছু ঘটনা নথিভুক্ত করার সময়ও আমি একা ছিলাম। বিহারিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার সময়, তাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় তুলে ধরার সময়ও আমি একাই ছিলাম। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে আমি কাজ করছি কি না তা নিশ্চিত করা। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি কি সঠিকভাবে পালন করছি কি না? দ্বিতীয়ত, এটা করতে গিয়ে আমি কারও ক্ষতি করছি কি না?’
নিজের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘ক্ষমতা এমনভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। আব্বাসীয় আমলে সুফিরা সরকারি পদ এড়িয়ে চলতেন। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তারা অন্যদের ক্ষতি করবেন না, সেটা নিশ্চিত করা। এখন পর্যন্ত, এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। আশা করি আমার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি ভেবে ভবিষ্যতে গর্ব করতে পারব।’