চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় স্ট্রোকের রোগী নাজমা বেগমের (৫০) শরীরে পরপর চারটি ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি মারা যান। পরে আক্তার হোসেন ও ইদ্রিস চৌধুরী নামের দুই অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশে তুলে দেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ইদ্রিস নিজেকে পল্লিচিকিৎসক দাবি করে নাজমার শরীরে ইনজেকশন দিয়েছিলেন। তবে তিনি পুলিশকে এ-সংক্রান্ত কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। গত বছরের ১৯ মার্চ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে সালমা আক্তার (২৩) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।
এভাবে ভুয়া ও নিবন্ধনহীন চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন নিবন্ধনহীন ভুয়া চিকিৎসকরা। অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে ভুল চিকিৎসার ঘটনা। ভুল ও অপচিকিৎসার ঘটনাগুলো অধিকাংশই ঘটে গ্রাম পর্যায়ে।
নিয়ম মতে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধিত চিকিৎসকরাই নামের আগে ‘ডা.’ লিখে চিকিৎসা দিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভুয়া ডাক্তাররা কোনো গাইডলাইন অনুসরণ না করে সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা, মেডিকেল সম্পর্কিত আপডেট কোনো ধারণা না থাকা, অপ্রয়োজনীয় ও ভুল ওষুধ দিয়ে রোগীর অবস্থা খারাপ বা সংকটাপন্ন করা, রোগ নির্ণয় ছাড়াই চিকিৎসা প্রদান করা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা থাকা ও গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের সরলতা পুঁজি করে ব্যবসা করা হচ্ছে। তাই নিবন্ধিত চিকিৎসকরা এসব ভুয়া চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে আইনের শাসন প্রয়োগ করার দাবি উঠেছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রাম ও পল্লী চিকিৎসকদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করাসহ প্রয়োজনীয় নানা নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাছাড়া, ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়েও আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। গত তিন মাসে তিনজন ভুয়া চিকিৎসককে লিখিত মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত খবর পেলেই আমরা ডেকে তাদের সতর্ক করছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ভুয়া চিকিৎসকদের একটি তালিকা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, গ্রাম পর্যায় থেকে ভুল চিকিৎসা নিয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে আসেন। ততক্ষণে রোগীর যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে যায়। এমন অবস্থায় রোগী কখনো সুস্থ হন, কখনো দুর্ঘটনার শিকার হন।