নরসিংদী পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো এখন কার্যত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা আর ধুলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পৌরবাসীর জীবনযাত্রা। শহরের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে শাহেপ্রতাব, খাটেহারা, হেমেন্দ্র সাহার মোড়, বাজির মোড়, স্টেশন রোড, শাপলা চত্বর মডেল থানা রোড, মালাকার মোড় থেকে ডিসি রোড, ঘোড়াদিয়া, চিনিশপুর, বৌয়াপুর, বাইপাস বেরিবাধ, বাসাইল ও রেজিস্ট্রি অফিস রোড—প্রায় সব সড়কেরই বেহাল অবস্থা। যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী ও পথচারীরা।
খাটেহারা এলাকার চিত্র যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা। চারদিকে গর্ত আর পানির জমাটে প্রতিদিন অটোরিকশা উল্টে যাত্রী আহত হচ্ছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নরসিংদী শিল্পসমৃদ্ধ শহর হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আতঙ্কের নাম। পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানালেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নরসিংদী পৌরসভা ১৯৭২ সালে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও বাস্তবে সেই মর্যাদা রাস্তাঘাটে প্রতিফলিত হয়নি। দুর্ঘটনা আর যানজটে অতিষ্ঠ পৌরবাসী বলছেন, এখন রাস্তায় নামলেই আতঙ্ক কাজ করে।
বাসিন্দা দিপায়ন দাস বলেন, “শহরে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কারণ বাড়ি থেকে বের হলেই সড়কের বেহাল দশা। হাঁটার কোনো উপায় নেই, চারপাশে জলাবদ্ধতা আর খানা-খন্দ। এতদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে, কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।”
অন্য বাসিন্দা সাজু ভূইয়া বলেন, “নরসিংদীর সব রাস্তা-ঘাট খারাপ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বিপদে আছে। সিএনজি অটোরিকশা এসব খানা-খন্দ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না করলে মানুষের জীবনযাপন নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে।”
তবে নরসিংদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করতে শিগগিরই মোবাইল মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে পৌর প্রশাসক মনোয়ার হোসেন স্বীকার করেছেন, “বিগত সময়ে যেভাবে সড়ক উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। বর্তমানে বাজেট বরাদ্দ না থাকায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়ে দ্রুত নতুন প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের বসবাস এই নরসিংদী পৌরসভায়। তাদের একটাই দাবি—অবিলম্বে সড়ক সংস্কার করে ভোগান্তি কমানো এবং দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিডি প্রতিদিন/আশিক