আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত ‘পোর্ট ও লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ক একটি অ্যামচ্যাম ব্রেকফাস্ট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম)।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজামান এবং এলিকট ড্রেজ এন্টারপ্রাইজ, এলএলসি’র ব্যবসা উন্নয়ন পরিচালক ফিলিপ গ্রভ।
অ্যামচ্যাম সংলাপের স্পনসর ছিল ইউপিএস বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যামচ্যাম বাংলাদেশ’র সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান প্রদান করছে এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২০ শতাংশ অবদান রাখছে। এত বড় পরিসরের খাত হওয়া সত্ত্বেও এটি এখনও অপর্যাপ্তভাবে সমন্বিত এবং উন্নয়নশীল। বিশ্বব্যাপী সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল, বিশেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও অবকাঠামোতে স্কোর ২.৩। ২০২৪ সালে প্রণীত একটি লজিস্টিকস নীতিমালা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অংশীজনদের সমন্বয়, কার্যকর লজিস্টিকস কৌশল এবং নীতিমালার প্রয়োগের আহ্বান জানান, যাতে খাতটির পূর্ণ সম্ভাবনা উম্মোচিত হয়।
ফিলিপ গ্রভ অ্যামচ্যাম বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এবং অনুষ্ঠানের স্পনসরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর ১৬ বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য অংশীদারত্বের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং লজিস্টিকস খাতে দৃশ্যমানতা-যেমন পণ্য, খরচ ও তথ্যের রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং-এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি ক্লাউড-ভিত্তিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত প্রযুক্তির মাধ্যমে লজিস্টিকস দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন এবং বাংলাদেশি অংশীজনদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের সংযোগ স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এরপর অ্যামচ্যাম বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কায়সার মোহাম্মদ রিয়াদের নেতৃত্বে অংশীজনদের সঙ্গে একটি কেন্দ্রিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে পোর্ট ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, বিদ্যমান মার্কিন বিনিযোগকারীদের জন্য ব্যবসা পরিবেশ শক্তিশালীকরণ এবং বাংলাদেশের পোর্ট ও লজিস্টিকস খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় হয়।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সোহাইল হাসান, মেডিটেরেনিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কান্ট্রি হেড প্রকৌশলী হারুন-উর-রশীদ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি ইয়াছের রিজভী ও কনভেয়র লজিস্টিকস’র চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’র সাবেক সভাপতি কবির আহমেদ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’র চেয়ারম্যান সায়েদ মোহাম্মদ আরিফ, ম্যা’রিটাইম আইন বিশেষজ্ঞ মহিউউদ্দিন কাদির, রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক পোর্ট অপারেটর সাহেদ মোহাম্মদ তারেক-তাঁরা খাতের অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেন।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের দ্রুতগতির পোর্ট আধুনিকায়নের বিষয়টি তুলে ধরেন, যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের ১৬% বাণিজ্য এবং ১৮% কনটেইনার পরিচালনা করে। অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে, জাইকা-সমর্থিত একটি জাতীয় পোর্ট নীতিমালা বছরের শেষ নাগাদ প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ই-গেট, রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং এবং একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশনের মতো ডিজিটাল উন্নয়ন। বৈশ্বিক অপারেটরদের সঙ্গে কৌশলগত প্রকল্প ও অংশীদারিত্ব চলমান রয়েছে। দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা ২৭ বছরের নিচে এবং সক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থানের সন্ধানে থাকায়, বাংলাদেশের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতির ধারাবাহিকতা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—যাতে সবুজ পোর্ট উন্নয়ন শুধু কার্বন লক্ষ্যমাত্রা পূরণই না করে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাণিজ্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত/ইই