ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলের ফ্লোর ও দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সদ্য নির্মিত দশতলা বিশিষ্ট ৩টি আবাসিক হলের ফ্লোরেও ফাটল দেখা গেছে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্মাণ কাজে দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের কারণে স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার পরও আবাসিক হলে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার ভূমিকম্পের পর সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ও ছাত্রীদের ফয়জুন্নেসা হল, ফজিলতুন্নেসা হল এবং ১০ নম্বর ছাত্র হলের মেঝেসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রীদের ফয়জুন্নেসা হলের বিভিন্ন পিলারেও ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া, পুরোনো এ হলটির বিভিন্ন জায়গায় ছাদ খসে পড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীকে তাদের স্ব স্ব হলের বিভিন্ন ফাটলের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এসব পোস্টে তারা নতুন হলগুলো নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে তদন্তের দাবি জানান।
ভূমিকম্পের মুহূর্তের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমি হলের ৬ তলায় ছিলাম। হঠাৎ ভবনটি প্রায় ১৫ সেকেন্ড ধরে তীব্রভাবে কাঁপতে থাকে। প্রথম মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। আমি ও বন্ধুরা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করি। নেমে আসার সময় সিঁড়িতে প্রচণ্ড ভিড় তৈরি হয়, অনেকে চিৎকার করছিল। নিচে নেমে সবার মুখে একই আতঙ্ক দেখেছি। যে মুহূর্তে ভবনটি কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পরে ভবনের দেয়ালে ও বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখতে পাই, যা আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। আমরা আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করার পাশাপাশি নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা হলগুলো পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ফাটল দেখেছি। তবে সেগুলো মেঝেতে ফাটল। একটি ভবনের ফ্লোরে ও দেয়ালে ফাটল ধরতেই পারে। যদি কোনো ভবনে স্ট্রাকচারাল এলিমেন্ট ঠিক থাকে (কলাম, বিম, ভিত) তাহলে সেগুলোতে কোনো ঝুঁকি নেই। ভূমিকম্পে যেসব ফাটল ধরেছে সেগুলো স্ট্রাকচারাল এলিমেন্টজনিত সমস্যা নয়। তারপরও আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে বুয়েটের এক্সপার্ট টিম দিয়ে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। সব কাজই স্বচ্ছভাবে হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের নতুন হলগুলো বিগত প্রশাসনের সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবনগুলো নির্মাণে যে দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে সেটি দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকৌশল বিভাগকে জরুরি তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলকে ফাটলের প্রকৃতি পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক