চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা একাডেমিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা ও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা এখনো বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল চালাচ্ছেন।
একাডেমিক কার্যক্রম শুরু ৭ সেপ্টেম্বর
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে চবি-তে ক্লাস, পরীক্ষা ও সকল একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু হবে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে না পড়ে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” উল্লেখ্য, সংঘর্ষের কারণে প্রশাসন ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।
গুরুতর আহত মামুনের খুলি ফ্রিজে সংরক্ষিত
সংঘর্ষে গুরুতর আহত সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মামুন মিয়ার মাথার অস্ত্রোপচারে অপসারিত ১৩ টুকরো হাড় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি করেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। ইসলামের স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম গুরুতর অবস্থায় ঢাকার এনআইসিভিডি-তে চিকিৎসাধীন।
সংঘর্ষ মামলায় আটজনের জামিন নামঞ্জুর
সংঘর্ষে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামির জামিন আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার এ আদেশ দেন। গ্রেফতারকৃতরা হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম এজাহারে থাকলেও বাকিরা তদন্তে আসামি হিসেবে চিহ্নিত হন।
প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার, আহতদের চিকিৎসা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল প্রক্টর অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন—
“১, ২, ৩, ৪, প্রক্টর তুই গদি ছাড়”
“আমার ভাই আইসিইউতে, প্রশাসন দায়ী”
শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি:
১. আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ ও যথাযথ চিকিৎসা।
২. নিরাপত্তাহীন শিক্ষার্থীদের ভ্রাম্যমাণ আবাসন ও মালামাল উদ্ধারের উদ্যোগ।
৩. চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত।
৪. অপরাধীদের বিচার ও নিরপরাধ এলাকার লোকদের হয়রানি বন্ধ।
৫. অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও নিয়মিত বৈঠক।
৬. সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাস রোডম্যাপ বাস্তবায়ন।
৭. প্রক্টোরিয়াল বডির প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ।
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মশাল মিছিল
শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চবি ছাত্রদলের মশাল মিছিল আয়োজন করেন। অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দেন—
“প্রশাসনের পদত্যাগ চাই”
“শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই”
“ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই”
বিডি প্রতিদিন/আশিক