২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কার্যাদেশ ছাড়া সরবরাহ করা আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ওষুধ ও প্যাথলজিসামগ্রী মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের অসাধু কর্মচারীদের একটি চক্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের নিম্নমানের ওষুধ ও প্যাথলজিসামগ্রী সরবরাহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে আনিসুর রহমান বদলি হয়ে যাওয়ায় ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা। এদিকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ কেন হয়েছে, এ কারণ নির্ধারণে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নির্দেশে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান, পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি ও ডেপুটি সিভিল সার্জনকে সদস্য করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমানের মৌখিক নির্দেশে স্টোরকিপার সোলেমান আহমদ ওষুধ ও প্যাথলজিসামগ্রীগুলো রিসিভ করে হাসপাতালের স্টোর ও বারান্দায় রাখেন। সোলেমান আহমদ জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমানের মৌখিক সুপারিশে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনিসা করপোরেশন সরবরাহ করেছিল গেল বছরের শুরুর দিকে। সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে সরবরাহের কার্যাদেশ না থাকায় স্টোরের নথিভুক্ত করা হয়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকেও এর মূল্য পরিশোধ বা বিল প্রদান করা হয়নি। সোলেমান আরও জানান, ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনে আনিস স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ ও প্যাথলজিসামগ্রী হাসপাতালে সরবরাহ করে। এর মধ্যে বদলি হয়ে যান আনিসুর রহমান। পরে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান। কিন্তু কার্যাদেশ না থাকায় এসবের বিল পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এরপর থেকে এগুলো স্টোর ও বারান্দায় পড়ে রয়েছে।
সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া তত্ত্ববধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ওষুধগুলো সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে প্রেরিত কোনো চাহিদাপত্র ছিল না। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী ওষুধগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু সেগুলো আনা হয়েছিল বাইরে থেকে। যার বেশির ভাগ নিম্নমানের। এ কারণে আমি ওই ওষুধ ও প্যাথলজিসামগ্রী গ্রহণ করিনি। কোনো বিলও পরিশোধ করিনি। তিনি আরও বলেন, ওই সময় হাসপাতালের ওষুধসামগ্রীর সরবরাহের দায়িত্বে ছিল ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনিসা করপোরেশন। তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন হাসপাতালের স্টোরকিপার সোলেমান আহমদ ও হিসাবরক্ষক ছমির উদ্দিন।
আরএমও ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। রোগীরা নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সুমন বণিক বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধসামগ্রীর বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই এ ঘটনায় দায়ীরা যেন বিচারের আওতায় আসে।