দেশের মেডিকেল কলেজে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এ শিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আড়াই হাজারের বেশি আসন বরাদ্দ থাকলেও এবার ভর্তি হয়েছে মাত্র ১ হাজার। এতে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহীন প্রতিষ্ঠান, বিদেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির স্বীকৃতি না পাওয়াসহ নানা কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৬৭টি। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন। প্রতিষ্ঠানের বয়স পাঁচ বছর হলে ৪৫ ভাগ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারে কলেজগুলো। সে হিসাবে বর্তমানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ৭৬৪টি আসন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৪ জন। ফাঁকা থাকছে দেড় হাজারের বেশি আসন। পরে সেগুলোতে দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে আহছানিয়া মিশন মেডিকেল কলেজ, আসগর আলী মেডিকেল কলেজ, বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ, সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, জেড এইচ সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ। এ ছাড়া চারটি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে একজন করে। ১২টি মেডিকেলে ১০ জনেরও কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) অনুমোদন না পেলে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশে এমবিবিএস ভর্তির ক্ষেত্রে। একসময় আড়াই থেকে ৩ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসত বাংলাদেশে। এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করতে প্রতি শিক্ষার্থীর ব্যয় হয় ৫০ লাখ টাকার মতো। এ কারণে বছরে ২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পড়াশোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে বাংলাদেশে আসে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আছে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশ। কিন্তু সেই বাজার হারাতে বসেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) অনুমোদন পায়নি। এটা বিশ্বের মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে। দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এ প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া ভারতেও বেশ কিছু মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে, যারা কম খরচে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করছে।’ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ৩ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে এসেছিল। ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ১ হাজার ৭০০ জনে। গত বছর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১ হাজার ৯৩০ বিদেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সরকারি কলেজে আবেদন করেছিল ৩৯৪ ও বেসরকারিতে ১ হাজার ৪৮৯ জন। এ ছাড়া আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে আবেদন করেছিল ৪৭ জন।