যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাটের লঞ্চগুলো। যাত্রীর ভিড় না থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও কমেছে। কাটা পড়েছে অনেক লঞ্চ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই লঞ্চঘাটের এমন চিত্র। সদরঘাটে একসময় নৌযান শ্রমিক, কুলি আর হকারদের হাঁকডাকে সরগরম থাকলেও এখন তা কমে এসেছে। কারণ আগের মতো আর লঞ্চ চলে না। সরেজমিনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। লঞ্চসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি অঞ্চলে লঞ্চ সংখ্যা কমেছে। হাতে গোনা কয়েকটি লঞ্চ এ রুটে চলাচল করলেও যাত্রীর চরম সংকট। পণ্য পরিবহনের কারণে ভাড়া পুষিয়ে নেওয়া আবার কোনো কোনো লঞ্চের বিপরীতে নেওয়া হয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ। সে কারণে লঞ্চ সচল রাখা হয়েছে। তবে চাঁদপুর, ভোলা চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা অঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়েনি। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগের তুলনায় লঞ্চ কমেছে। ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌরুটে আগে লঞ্চ ছিল ২২৫টি। যাত্রী কমায় এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি। যাত্রী সংকটে কমেছে নৌপথও। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে। বরিশালগামী পারাবাত লঞ্চের বাবুল শরীফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাবে যাত্রীর সংকট লঞ্চে। পণ্য পরিবহনের কারণে লঞ্চ কোনো মতো টিকে আছে। তবে উৎসবের সময় লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সামনে পূজায় যাত্রীর চাপ থাকবে বলেও জানান তিনি।
লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বরিশাল রুটের কীর্তনখোলা-১০, কুয়াকাটা-২, অ্যাডভেঞ্চার-৯ ও সুরভী-৭ বন্ধ হয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এ লঞ্চগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে সুরভী-৭ মাঝে মধ্যে চলাচল করে। তাসরিফ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার আকতার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় লঞ্চ রুটে প্রভাব পড়েছে। ঈদের আগে যাত্রীদের চাপে বন্ধ হয়ে যেত ঘাট। কিন্তু এখন সেটি স্বপ্নের মতো। এমভি অথৈ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার এই লঞ্চের বয়স মাত্র তিন বছর, এজন্য বেশি কিছু মেরামত করা লাগেনি। সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ফজলুল হক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটে যাত্রী কম। বলা চলে অর্ধেকেরও কম। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাটুয়াখালীতে চলাচল করত স্বল্প দূরত্বের রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, বাউফল, মির্জাগঞ্জ ও দুমকীর অভ্যন্তরীণ লঞ্চ। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখন বেশির ভাগ লঞ্চই বন্ধ। এতে উপার্জন হারিয়েছেন লঞ্চঘাটের ফেরিওয়ালা, হকার, ক্ষুদ্র দোকানদার। পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে প্রতিদিন চলত চারটি বিলাসবহুল বড় লঞ্চ। এখন লঞ্চ চলে একটি। এক সময় নৌপথে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত ১২ ঘণ্টা। এখন সড়কপথে ছয় ঘণ্টায় যাওয়া যায় কুয়াকাটা। অবশ্য এখনো আয়েশি ভ্রমণের জন্য লঞ্চই পছন্দ করেন কেউ কেউ। এদিকে যাত্রীর অভাবে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপা ও পাতাবুনিয়া রুটের লঞ্চ। অন্যান্য রুটগুলোতেও লঞ্চ বন্ধের পথে। তাই এখনই পরিকল্পনা না নিলে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সব লঞ্চই বন্ধের আশঙ্কা করছেন নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টরা।