প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে শুধু গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, গড়ে উঠবে এক নতুন শহর। সেখান থেকে তৈরি হবে আমাদের আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি। সমুদ্রই হবে বিশ্বের পথে আমাদের মহাসড়ক। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (মিডা) সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, সদস্য কমোডর তানজিম ফারুক ও মো. সারোয়ার আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী প্রকল্পের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেন মিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। মিডার আগামী চার মাসের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি। আশিক চৌধুরী জানান, প্রকল্পটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপ ২০২৫ থেকে ২০৩০, দ্বিতীয় ধাপ ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং তৃতীয় ধাপ ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে এবং জিডিপিতে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধু গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, আমাদের একটা ব্লু-ইকোনমি গড়ে তোলার ভিশন নিয়ে কাজ করতে হবে। মহেশখালী অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেইনিং ফ্যাসিলিটি গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিতে হবে। গভীর সমুদ্র নিয়ে গবেষণার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সমুদ্রজগতে কখনো প্রবেশ করিনি। ওটা নিয়ে চিন্তাও করিনি। এ বিষয়ে গবেষণা, ফাইন্ডিংস নেই। এ সম্পর্কিত কী কী গবেষণা আছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং নিজস্ব গবেষণা করতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান দরকার। একাডেমিয়া গড়ে তুলতে হবে, ওশান ইকোনমি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ৩৩ হাজার একর জমি নিয়ে প্রকল্পটি গড়ে উঠছে। বিগত সরকারের সময় যখন এটা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়, তখন এটাকে শুধু পাওয়ার হাব ও ডিপ সি পোর্ট হিসেবে চিন্তা করা হয়েছিল। এখন সেখানে গেলে মরুভূমি মনে হতে পারে। ৩০ বছরের মধ্যে জায়গাটিকে আমরা সিঙ্গাপুর, সাংহাইয়ের মতো টাউনশিপ করতে চাই। এখানে ৬০-৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আশা করছি, যার মধ্যে ৫ বিলিয়ন সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। এখানে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে দেড় লাখ মানুষের, যা পরোক্ষভাবে দাঁড়াবে ২৫ লাখে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে চারটি পিলার। প্রথমটি পাওয়ার হাব। ২০১৮ সালে প্রথমে ১০ গিগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা করা হয়। এক গিগাওয়াট হয়ে গেছে। আর আমরা কয়লা বিদ্যুৎ করব না। আশা করছি, এখানকার বিদ্যুৎ পুরো চট্টগ্রাম জোনে সরবরাহ করবে। গ্যাস বা নিউক্লিয়ার পাওয়ারের চিন্তা করতে পারি। দ্বিতীয় পিলার গভীর সমুদ্রবন্দর। বাংলাদেশের পোর্টগুলো মূলত নদীকেন্দ্রিক। বড় জাহাজ আসতে পারে না। মাতারবাড়ীতে এমন পোর্ট করব যেখান থেকে মালামাল নিয়ে বড় জাহাজ সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা চলে যাবে। এতে খরচ ও সময় বাঁচবে। তৃতীয় পিলার উৎপাদন হাব। এখানে অয়েল রিফাইনারি থেকে সব ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। বিদেশি কেউ চাইলে এখানে মাল উৎপাদন করে নিয়ে যেতে পারবে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। চতুর্থ পিলার ব্লু-ইকোনমি। ব্লু-ইকোনমিতে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। ফিশিং, শিপ বিল্ডিং, শিপ রিপেয়ারিং অনেক কিছু। এ প্রকল্প সমুদ্র থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট আনতে কাজ করবে। সরকারের অনেকগুলো সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করে। সমন্বয় না থাকায় আউটপুট আসে না। আমরা সমন্বয় করার চেষ্টা করব।