বিজয় দিবসের ৮০তম পূর্তি উপলক্ষে চীন প্রকাশ্যে আনল অত্যাধুনিক ডিএফ-৫সি তরল জ্বালানিযুক্ত আন্তঃমহাদেশীয় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রটির আনুমানিক পাল্লা ২০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। শত্রুঘাঁটিতে পৌঁছে নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানারও ক্ষমতা রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটির।
মঙ্গলবারই চীন প্রভাবিত জোট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর দু’দিনের বৈঠক শেষ হয়েছে। এর পরদিন বুধবার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতার কাছে নিজেদের পরমাণু ক্ষমতা প্রদর্শন করল চীন।
চীনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিবিদ তথা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইয়ং চেংজুন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, ডিএফ-৫সি তরল জ্বালানিযুক্ত আন্তঃমহাদেশীয় কৌশলগত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি চীনের হাতে থাকা ডিএফ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির উন্নততম রূপ।
ইয়ং জানিয়েছেন, ডিএফ-৫সির ছ’টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, ক্ষেপণাস্ত্রটিকে নয়া রূপে সাজানো হয়েছে। এর একটি নতুন কাঠামো রয়েছে, কারণ পুরো ক্ষেপণাস্ত্রটি তিনটি আলাদা আলাদা অংশে পরিবহণ করা হয়। এ-ও আশা করা হচ্ছে যে, এর আগের ডিএফ-৫ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির থেকে দ্রুত উৎক্ষেপণ করা যাবে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটিকে।
দ্বিতীয়ত, ডিএফ-৫সি একটি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে আঘাত হানতে পারবে মারণাস্ত্রটি। আঘাত হানতে পারবে যে কোনও দেশের সামরিক ঘাঁটিতে।
ইয়ং জানিয়েছেন, ডিএফ-৫সির তৃতীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল, উৎক্ষেপণ পদ্ধতির বৈচিত্র। ডিএফ সিরিজের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো থেকে এটির উৎক্ষেপণ পদ্ধতি অনন্য বলেই জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত উড়ানের ক্ষমতা। কৌশলগত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির উড়ানের গতি ১০ ম্যাক (কোনও বস্তুর গতি এবং আশপাশের মাধ্যমের শব্দের গতির অনুপাত। এটি একটি সংখ্যা দিয়ে বোঝানো হয়।) পর্যন্ত উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বাধা দেওয়াও মুখের কথা নয়।
ইয়ংয়ের মতে, ডিএফ-৫সির পঞ্চম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি স্বাধীন ভাবে আঘাত হানতে পারে এমন একাধিক ছোট ক্ষেপণাস্ত্রও বহন করতে সক্ষম সেটি।
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য হল, নির্ভুল ভাবে নির্দেশিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা। ইয়ং জানিয়েছেন, আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সাধারণত ইনর্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম এবং স্টারলাইট গাইডেন্স সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেখানে ডিএফ-৫সি ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ব্যবহার করছে নিজেদের তৈরি বেইডো নেভিগেশন সিস্টেম। ফলে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে দীর্ঘপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং জাপানের বিরুদ্ধে চীনের যুদ্ধজয়কে স্মরণীয় রাখতে ৩ সেপ্টেম্বর দিনটি বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে বেইজিং। এবার ৮০তম বিজয় দিবস পালন করছে তারা।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন ১৯৪৫ সালে জাপানে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির বুকে যে পরমাণু বোমা দু’টি আঘাত হেনেছিল, তার থেকে অন্তত ২০০ গুণ শক্তিশালী চীনের এই অত্যাধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও গ্লোবাল টাইমস।
বিডি-প্রতিদিন/শআ