গত ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে দুটি বড় আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। একটি হলো গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলাকালীন কাতারে হামাসের দপ্তরে ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং অন্যটি হলো ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশ। ট্রাম্পের জন্য এই দুটি ঘটনাই বিব্রতকর, কারণ এই দুই সংকটের সমাধান তিনি দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মাত্র দুই দিন আগে ট্রাম্প প্রশাসন গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য তাদের সর্বশেষ প্রস্তাব পেশ করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে লিখেছিলেন, এটি আমার শেষ সতর্কতা, আর কোনো সুযোগ আসবে না!
কিন্তু ইসরায়েল এই প্রস্তাবের জবাব শোনার জন্য অপেক্ষা করেনি। কাতারে হামাসের নেতৃত্বের উপর চালানো বিমান হামলা কেবল ট্রাম্পের প্রস্তাবকেই উড়িয়ে দেয়নি, এটি পুরো শান্তি আলোচনার কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার উপর মার্কিন প্রশাসন গভীরভাবে নির্ভরশীল ছিল।
এই হামলার পর ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের কাছে আগে থেকে কোনো তথ্য ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। যদি ওয়াশিংটনের অনুমতি নাও থাকে, তাহলে এটি নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের প্রভাব কতটা কম, তারই ইঙ্গিত দেয়।
হোয়াইট হাউস এই হামলার নিন্দা করে বলেছে, কাতারের মতো একটি মিত্র দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর একতরফা বোমা হামলা ইসরায়েল বা আমেরিকার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে পারে না। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, এটি একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন পদক্ষেপ ছিল। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার দুর্বলতার একটি বড় লক্ষণ হিসেবে দেখা হবে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে পোল্যান্ড থেকে। ট্রাম্প সম্প্রতি আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে পুতিন তার সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চান। কিন্তু এর বদলে ঘটেছে উত্তেজনা বৃদ্ধি। ইউক্রেনের ওপর রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে এবং এই প্রথম রাশিয়ার ড্রোন ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশসীমায় গভীর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমরা যুদ্ধের এত কাছাকাছি আর কখনো আসিনি। যদিও রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, এটি ছিল ন্যাটোর সংকল্প পরীক্ষার একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা। এবং যেহেতু আমেরিকা এই জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য, তাই এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংকল্পেরও পরীক্ষা।
ডোহা হামলার বিষয়ে ট্রাম্প দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানালেও পোল্যান্ডের বিষয়ে তার প্রাথমিক নীরবতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পরে তিনি একটি অস্পষ্ট টুইট করেন, রাশিয়ার ড্রোন দিয়ে পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণ কী? তার এই নীরবতা এবং রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে তার অনিচ্ছা ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
দুই দিনে দুটি ভিন্ন সংঘাত এবং দুটি কঠিন ধাঁধা। যে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলেই মনে করা হতো, তার জন্য এটি একটি কঠিন পরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি কীভাবে সাড়া দেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমেরিকার মিত্ররা চাইছে, তাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে ওয়াশিংটনের সমর্থন যেন পাওয়া যায়, এই বিষয়ে ট্রাম্প তাদের আশ্বস্ত করবেন।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল