ছোট বেলা থেকেই পাখির প্রতি নেশা থাকলেও কখনো পাখি পালনকে জীবিকা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি। জীবনের তাগিদে আর পরিবারের সচ্ছলতার জন্য দুই যুগ আগে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাসে। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে কিছুদিন পর চলে আসেন দেশে। একদিকে নিজের ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে সংসারের হাল ধরা। সবমিলিয়ে অকূল পাথারে পড়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মফিজ মিয়া।
বেকার-হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করাকালে চোখে শর্ষে ফুল দেখছিলেন। সময় কাটানোর জন্য দুটি পাখি পালন শুরু করেন। সেই পাখির কূজনই বদলে দিল মফিজের গতিপথ। হতাশা-অবসাদ থেকে বের হয়ে এসে তিনি সফল একজন উদ্যোক্তা। ছোটবেলার পাখির প্রতি আবেগ-ভালোবাসা আজ ধরা দিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন হয়ে।
মফিজের পাখি পালন খুব মসৃণ ছিল না। বাড়ির নিজ লোকদের কাছ থেকেই প্রথমে বাধা পেয়েছেন। উৎসাহ হারালেও দমে যাননি। এগিয়ে গেছেন অনেক কটু কথা সত্ত্বেও। দুটি পাখি দিয়ে শুরু করা মফিজ এখন কবুতরসহ নানা প্রজাতির প্রায় ৫ শতাধিক পাখির মালিক।
এ পেশা দিয়ে বাড়িতে একটি একতলা বিল্ডিং ঘর তৈরি করেছেন। সেই ঘরে মফিজের স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি বসবাস করে পাখিও। একই ছাদের নিচে নিজের সংসার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মফিজ মিয়া। পেছনের হতাশার গল্পের পর আজ তিনিই লিখছেন সফলতার গল্প। শান্তিপুর গ্রামসহ কসবা উপজেলায় মফিজ মিয়া নিজেকে একজন অনুকরণীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। সমাজে আজ তাকে ‘পাখি মফিজ’ নামেও চেনে।
জানা গেছে, সংসারের হাল ধরতে প্রায় দুই যুগ আগে তরুণ বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়া। কিছুদিন থাকার পর দেশে চলে আসেন। সময় কাটানোর জন্য স্থানীয় বাজার থেকে দু’টি পাখি ক্রয় করে আনেন। কিছুদিন পর আরও কয়েকটা পাখির ছানা ক্রয় করে আনেন। পরে এগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসায়ের প্রসার। পাখির সাথে শুরু করেন পশুপালনও। বর্তমানে তার সংগ্রহে কবুতরসহ পাঁচশ’র মতো পাখি আছে। কসবার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পাখিপ্রেমী বাড়ি এসে পাখি কিনে নিয়ে যান। এখন মাসে প্রায় লাখ টাকা আয়। এ আয় থেকেই তিনি নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ করেছেন একটি ভবন। মফিজ মিয়ার ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বর্তমান সংসার। সমাজে আজ তাকে ‘পাখি মফিজ’ নামে চেনে।
শান্তিপুর গ্রামে মফিজের বাড়ি থেকে কবুতর কিনতে আসা আরজু মিয়া বলেন, আমি প্রায়ই আসি পাখি মফিজের এখানে। বাড়িতে আমিও কবুতরসহ কিছু পাখি পালন করি। উনাকে দেখে উৎসাহ পাই।
মফিজ মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকেই পাখির প্রতি নেশা। তবে জীবিকা হিসেবে নেওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। বর্তমানে প্রতিমাসে ১০-১২ লাখ টাকার পাখি বিক্রি করি। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে এক লাখ টাকার বেশি আয় হয়। পাখির জন্য আরেকটি টিনশেড দালানও করেছি। পাখির এই খামারকে আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।
তিনি জানান, তার এখানে ময়না ও টিয়া পাখি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। যেসব পাখি কথা বলতে পারে, সেগুলোর দাম বেশি। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় টিয়া ও ময়না বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
কসবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারেক মাহমুদ বলেন, মফিজ মিয়া খামার করে স্বাবলম্বী। তিনি পাখি পালনের একজন মডেল ব্যক্তি। যখনই পরামর্শ দরকার, তখনই সেটা আমরা দিয়ে থাকি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই