দিনের মেকআপ রাতের মেকআপ থেকে বেশ আলাদা। দিনের উজ্জ্বল আলো আপনার ত্বকের খুঁতগুলো যেমন স্পষ্ট করে তোলে, তেমনি ঝলমলে, সতেজ লুক ফুটিয়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে যখন ছবি তোলার ব্যাপার থাকে, তখন এর মূলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে- ত্বক প্রস্তুতি এবং ন্যাচারাল গ্লো ও হাইলাইটিং; যা আপনার সাজকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।
দিনের বেলায় অতিরিক্ত ভারী মেকআপ না করে বরং ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করা উচিত। এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো একটি মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর বেস তৈরি করা। শুরুতেই ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করে, ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। এরপর একটি হালকা কভারেজের ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন, যা আপনার ত্বকের রঙের সঙ্গে মিশে যায়। মনে রাখবেন, দিনের বেলায় ম্যাট ফিনিশ ফাউন্ডেশনের চেয়ে ডিউয়ি ফিনিশ বেশি ভালো দেখায়, কারণ এটি ত্বকে একটি প্রাকৃতিক আভা এনে দেয়।
সবার আগে ত্বক প্রস্তুতি : সাজের ভিত্তি
ফ্লোলেস মেকআপের প্রথম ধাপ ত্বকের সঠিক প্রস্তুতি। মেকআপ কেবল ত্বকের ওপরে নয়, বরং ত্বকের ভিতরেও এর প্রভাব পড়ে। তাই প্রথমেই আপনার ত্বককে মেকআপের জন্য প্রস্তুত করে তোলা অপরিহার্য।
♦ পরিষ্কার করুন : প্রথমে আপনার ত্বককে একটি মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে ত্বকে জমে থাকা তেল, ময়লা এবং মরা কোষ দূর হবে, যা মেকআপকে আরও মসৃণভাবে বসতে সাহায্য করবে।
♦ টোনিং : পরিষ্কার করার পর একটি ভালো টোনার ব্যবহার করুন। যা ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে এবং লোমকূপ (পোরস) সংকুচিত করতে সাহায্য করে।
♦ ময়েশ্চারাইজিং : এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি। দিনের বেলায় অবশ্যই একটি হালকা, নন-গ্রিজি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং মেকআপ সহজে ত্বকে মিশে যেতে সাহায্য করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ভারী ময়েশ্চারাইজার এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল-বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
♦ সানস্ক্রিন : দিনের বেলায় বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে। ঝচঋ ৩০ বা তার বেশি যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। অনেক ময়েশ্চারাইজারেই আজকাল এসপিএফ থাকে, যা আপনার কাজকে আরও সহজ করে তুলবে।
♦ প্রাইমার : মেকআপ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখার জন্য একটি ভালো প্রাইমার ব্যবহার করুন। এটি লোমকূপ ঢেকে দেয় এবং ত্বকের ওপর একটি মসৃণ স্তর তৈরি করে, যার ফলে ফাউন্ডেশন আরও ভালোভাবে বসে।
ন্যাচারাল গ্লো ও হাইলাইটিং : ঝলমলে লুক
এবার পালা মেকআপের। ন্যাচারাল গ্লো আনা এবং হাইলাইটিংয়ের মাধ্যমে মুখের ফিচারগুলো ফুটিয়ে তোলা। দিনের আলোতে ভারী ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে হালকা কভারেজের ফাউন্ডেশন, বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বককে শ্বাস নিতে দেবে এবং প্রাকৃতিক দেখাবে।
♦ যদি প্রয়োজন হয় শুধু নির্দিষ্ট দাগ বা চোখের নিচের কালো দাগে কনসিলার ব্যবহার করুন।
♦ পাউডার ব্লাশের চেয়ে ক্রিম ব্লাশ দিনের বেলায় অনেক বেশি প্রাকৃতিক দেখায়। গালের আপেল অংশে হালকা পিচ বা গোলাপি শেডের ক্রিম ব্লাশ ব্যবহার করুন এবং সুন্দরভাবে ব্লেন্ড করে দিন। এটি আপনার গালে একটি সতেজ ও প্রাণবন্ত আভা এনে দেবে।
♦ দিনের বেলায় হাইলাইটিং হলো সাজের মূল আকর্ষণ। এটি মুখের উঁচু অংশগুলোকে আলোকিত করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেয়। এক্ষেত্রে ক্রিম বা লিকুইড হাইলাইটার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
♦ এটি গালের ওপরের অংশকে (চিকবোনস) সংজ্ঞায়িত করে এবং ছবিতে সুন্দর আভা দেয়।
♦ এটি নাককে আরও মসৃণ ও সুন্দর দেখায়।
♦ চোখকে বা ভ্রুর নিচে (ব্রো বোন) আরও উজ্জ্বল ও খোলা দেখানোর জন্য এখানে হাইলাইটার ব্যবহার করুন।
♦ এটি আপনার ঠোঁটকে অর্থাৎ ঠোঁটের ওপরের অংশে (কিউপিডস বো) আরও ভরাট ও আকর্ষণীয় দেখায়।
হাইলাইটার খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন। আর এটি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন, যাতে মনে হয় এটি আপনার ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। চোখের জন্য হালকা নিউট্রাল শেডের আইশ্যাডো এবং এক কোট মাসকারা যথেষ্ট। আর হ্যাঁ, সবশেষে ন্যুড বা হালকা রঙের লিপগ্লস বা লিপস্টিক ডে-টাইম গ্ল্যাম লুককে সম্পূর্ণ করবে।
মনে রাখবেন, দিনের বেলার সাজের মূল লক্ষ্য হলো আপনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলা, তাকে ঢেকে ফেলা নয়। এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনিও দিনের আলোতে পেতে পারেন নিখুঁত, ছবি তোলার মতো একটি ঝলমলে লুক!