বলিভিয়ার কারাকোলো অঞ্চলে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা একটি প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্সের (বৃহৎ স্থাপনা) সন্ধান পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি টিভানাকু নামে এক রহস্যময় আন্দীয় (Andean) সভ্যতার অংশ। এই সভ্যতা খ্রিস্টাব্দ ১০০০ সালের দিকে হারিয়ে যায়।
মন্দিরটির অবস্থান লেক টিটিকাকার দক্ষিণ-পূর্বে। সেখানে আগে গবেষকরা তেমন অনুসন্ধান চালাননি। এটি টিভানাকুর রাজধানী থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণে। গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল Antiquity-তে প্রকাশিত হয়েছে।
মন্দিরটির স্থানীয় নাম রাখা হয়েছে ‘পালাসপাতা’। এর আকার প্রায় ১২৫ মিটার লম্বা ও ১৪৫ মিটার চওড়া। অর্থাৎ প্রায় একটি শহরের ব্লকের সমান। চারপাশে ১৫টি কক্ষবিশিষ্ট প্রাঙ্গণ রয়েছে এবং মূল প্রবেশপথ পশ্চিমমুখী যা সূর্যের অবস্থান (সোলার ইকুইনক্স) অনুযায়ী তৈরি। স্থাপনাটির গঠন টিভানাকু সভ্যতার অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
টিভানাকু সমাজ সম্পর্কে জানা তথ্য খুব সীমিত। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টাব্দ ৭০০ সালের দিকে এ সমাজ গড়ে ওঠে। তারা আন্দিজ পর্বতমালার উঁচু সমতলে (টিটিকাকা বেসিন) বসবাস করত। কঠিন আবহাওয়ার কারণে ভুট্টার মতো শস্য উৎপাদন কঠিন ছিল। তাই তারা লামা বহর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য করত। রাজধানী টিভানাকু থেকেই বাণিজ্য ও সামাজিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত হতো।
গবেষকেরা মনে করছেন, পালাসপাতা ছিল টিভানাকুর একটি কৌশলগত ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখান থেকে তারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও পণ্য চলাচল নিয়ন্ত্রণ করত। ধর্মকেও তারা এই প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত।
মন্দিরে পাওয়া গেছে ‘কেরু কাপ’ নামের পাত্র, যা ভুট্টাজাতীয় পানীয় ‘চিচা’ পরিবেশনে ব্যবহার হতো। এটি প্রমাণ করে, মন্দিরে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ হতো।
টিভানাকু সমাজ কেন বিলীন হয়ে যায়, সে বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ মনে করেন খরার কারণে কৃষি ধ্বংস হয়েছিল, আবার কেউ মনে করেন পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ও সামাজিক অস্থিরতা মিলে জনঅভ্যুত্থান ঘটায়।
গবেষকেরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কার টিভানাকু সভ্যতার বিস্তার, ধর্মীয় রীতি ও বাণিজ্য নেটওয়ার্ক সম্পর্কে নতুন ধারণা দেবে। তবে এ রহস্যময় সমাজ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল