চুল আমাদের সৌন্দর্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সব ধরনের চুলের যত্ন একরকম নয়। তৈলাক্ত চুলের জন্য যেমন : এক ধরনের যত্ন দরকার, তেমনি রুক্ষ চুলের যত্নের পদ্ধতিও ভিন্ন। এই মৌসুমে চুলের নানা সমস্যা যেমন : খুশকি, চুল পড়া, আগা ফাটা ও নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। তাই দরকার সঠিক যত্নের, যা চুলের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
তৈলাক্ত ও রুক্ষ চুলের বিশেষ যত্ন
► ঘন ঘন শ্যাম্পু : তৈলাক্ত চুলের প্রধান সমস্যা হলো মাথার ত্বক সহজে ঘেমে গিয়ে চিটচিটে হয়ে যায়। এতে চুল অনুজ্জ্বল ও নিস্তেজ দেখায়। এ সমস্যা এড়াতে ঘন ঘন শ্যাম্পু করা জরুরি। যাদের চুল খুব বেশি তৈলাক্ত, তারা প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে পারেন।
► ডিম ও অলিভ অয়েল প্যাক : রুক্ষ চুলের জন্য শ্যাম্পু করার আগে একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি স্ক্যাল্প ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, তারপর শ্যাম্পু করুন। এতে চুল নরম, ঝরঝরে ও পরিষ্কার হবে।
► হেনা প্যাক : রুক্ষ চুলকে মসৃণ ও ঝলমলে করতে হেনা দারুণ কার্যকর। সপ্তাহে একবার হেনা, লেবুর রস, চায়ের লিকার ও ডিম ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগান। দুই ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
► কন্ডিশনারের ব্যবহার : রুক্ষ চুলের জন্য শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। পাঁচ মিনিট কন্ডিশনার রেখে ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
খুশকির ঘরোয়া সমাধান
খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা, যা চুল ঝরার অন্যতম কারণ। এমন সমস্যার সমাধানে চুল পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি।
► তেল ও লেবুর রস : রাতে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। সকালে লেবুর রস লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
► পিঁয়াজের রস : খুশকি দূর করতে পিঁয়াজের রসও খুব উপকারী, তবে এটি মাসে দুইবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
► ডিম ও নিম পাতার প্যাক : ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে লেবুর রস ও নিম পাতার রস মিশিয়ে চুলে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে খুশকির উপদ্রব কমবে।
► তেঁতুলের ব্যবহার : তেঁতুল খুশকি তাড়াতে দারুণ কার্যকর। পরিমাণমতো পানিতে তেঁতুল গুলে সেই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এটি ব্যবহারে খুশকি ও মাথা চুলকানো দূর হবে।
► টকদই ও মেহেদি : ছয় টেবিল চামচ টকদইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মেহেদি বাটা মিশিয়ে চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে খুশকিমুক্ত, ঝলমলে ও রেশমি চুল পাওয়া যাবে।
চুলের ধরন অনুযায়ী বাড়তি যত্ন
► স্বাভাবিক চুলের জন্য : সপ্তাহে একবার হালকা গরম তেল দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। এবং গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ১৫ মিনিট চুল পেঁচিয়ে রাখুন। একটি ডিম, ২ চা চামচ মধু, ২ চা চামচ আমলকীর রস, ২ চা চামচ অলিভ অয়েল, জবা ফুলের পেস্ট এবং সামান্য গরম পানি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ২৫ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন।
► শুষ্ক চুলের জন্য : নারিকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে হালকা গরম করে চুল ও স্ক্যাল্পে ২০ মিনিট ম্যাসাজে উপকার পাবেন। এবার গরম তোয়ালে দিয়ে স্টিম নিন এবং ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করে কন্ডিশনার লাগান। সবশেষে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়াও জবাফুল বাটা, মধু, আমলকী বাটা, টকদই, ডিমের কুসুম, মেথিগুঁড়া এবং ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী প্যাক তৈরি করে ঘণ্টাখানেক চুলে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তারপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।