মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার যে কোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। সোমবার হোয়াইট হাউসে এক বিশেষ শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্প এই প্রতিশ্রুতি দেন। যেখানে তিনি জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের একটি দলকে আতিথ্য দিয়েছেন। এর তিন দিন আগে শুক্রবার ট্রাম্প আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যখন নিরাপত্তার কথা আসবে, তখন অনেক সাহায্য পাওয়া যাবে।’ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে ইউরোপীয় দেশগুলোও যুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘তারা প্রথম সারির প্রতিরক্ষা। কারণ তারা সেখানে আছে, তবে আমরা তাদের সাহায্য করব।’
জেলেনস্কি এই প্রতিশ্রুতিকে ‘সামনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই নিশ্চয়তা ‘আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজে লিপিবদ্ধ হবে। জেলেনস্কি আরও জানান, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল দপ্তরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির যে বিপর্যয়কর বৈঠক হয়েছিল তার চেয়ে সোমবারের বৈঠকের সুর অনেক উষ্ণ ছিল। আগের বৈঠকে ইউক্রেনীয় নেতাকে প্রকাশ্যে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স। রয়টার্স লিখেছে, এসব সত্ত্বেও এখনো একটি শান্তিচুক্তি আসন্ন বলে মনে হয়নি। ওভাল দপ্তরে বৈঠক শুরুর একটু আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করার জন্য ইউক্রেনে নেটোভুক্ত দেশগুলো থেকে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছে। এটি ট্রাম্পের প্রস্তাবে জটিলতা যোগ করেছে।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কি, উভয়েই জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন সোমবারের এ বৈঠক অবশেষে পুতিনকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় আলোচনার দিকে এগিয়ে যাবে। সোমবার রাতে সামাজিক মাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার নেতাকে ফোন করেছিলেন এবং পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এরপর তিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের এক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুতিনই এই রকম প্রস্তাব করেছেন বলে ইউরোপীয় নেতাদের জানিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠক হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেৎসের ভাষ্য অনুযায়ী, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এই দুই নেতা বৈঠকে মিলিত হতে পারেন। সোমবার ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে হোয়াইট হাউসে হাজির ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টুব, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়েন ও নেটো মহাসচিব মার্ক রুটে।