সময়টা গরমের। প্রচণ্ড রোদ, সঙ্গে অসহনীয় গরম। আর হবেই না কেন! গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের দাপট, ঘামঝরা দিন আর ক্লান্তিকর পরিবেশ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ‘গরম’ এক অনিবার্য বাস্তবতা। এমন গরম থাকবে আরও বেশ কিছুদিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও তাই বলছে। প্রচণ্ড গরমে সবকিছুই বিরক্তিকর। সূর্যের প্রখর তাপ, আর্দ্রতা আর ঘাম- সব মিলিয়ে শরীর ও মন দুটোই কাহিল হয়ে পড়ে। তবে সঠিক পরিকল্পনা আর কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে গরমকেও হার মানানো সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক- গরমকালে কেমন হওয়া উচিত আমাদের দৈনন্দিন লাইফস্টাইল, পোশাক, রূপচর্চা এবং সাজসজ্জা। কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা...
কেমন হবে পোশাক
গরমে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরামই হওয়া উচিত প্রধান মাপকাঠি। যা আপনাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। সুতি, লিনেন, খাদি বা জর্জেট কাপড়ের পোশাক এসময় সবচেয়ে উপযোগী। এই কাপড়গুলো বাতাস চলাচলে সাহায্য করে এবং ঘাম শোষণ করে। সিনথেটিক বা সিল্কের মতো কাপড় এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো শরীর গরম রাখে। ঘাম শোষণ করতে পারে না। সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপস, ম্যাক্সি ড্রেস, সুতির শাড়ি ইত্যাদি গরমে আরামদায়ক। ফুলেল, চেক বা বলপ্রিন্টের কাপড় খুব চলছে। গজ কাপড় কিনে ঢিলেঢালা কামিজ বা কুর্তা বানিয়ে নিতে পারেন। ডিজাইনার লিপি খন্দকারের মতে, এসময় ভারী কাজের পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। পালাজ্জো, পাটিয়ালি কিংবা ধুতি পায়জামা এ সময় আরাম দেবে। গেঞ্জি কাপড়ের টপ গরমের জন্য ভালো। রং হিসেবে বেছে নিতে পারেন সাদা, হালকা নীল, গোলাপি, লেবু রং, হালকা সবুজ ইত্যাদি। বাদ দিন ‘শকিং’ বা গাঢ় রং। গাঢ় রং তাপ শোষণ করে, তাই এগুলো গরমের জন্য উপযুক্ত নয়।
আনুষঙ্গিক- পাশাপাশি সানগ্লাস, টুপি, ছাতা, স্কার্ফ রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। আর সতেজতা ধরে রাখতে পাতলা কাপড়ের রুমাল ও ভেজা টিস্যু, বডি স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
গরমে রূপচর্চা ও সাজসজ্জা
গরমে ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘাম আর তাপের কারণে ত্বক নি®প্রাণ হয়ে যেতে পারে এবং ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ত্বকের যত্ন :
♦ পরিষ্কার রাখা : দিনে অন্তত তিন-চারবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। বাইরে থেকে ফিরে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
♦ টোনার ব্যবহার : মুখ পরিষ্কার করার পর গোলাপজল বা শসার রস দিয়ে তৈরি টোনার ব্যবহার করুন। লোমকূপ সংকুচিত করবে এবং ত্বককে আরও সতেজ রাখবে।
♦ ময়েশ্চারাইজার : গরমেও ত্বকের আর্দ্রতা প্রয়োজন। হালকা জেল-ভিত্তিক বা অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
♦ সানস্ক্রিন : বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে ভালোমানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। ৩০ বা তার বেশি এসপিএফযুক্ত (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) সানস্ক্রিন ভালো।
♦ স্ক্রাবিং : সপ্তাহে একবার হালকা স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল থাকবে।
♦ ফেসপ্যাক : শসা, মুলতানি মাটি, চন্দন বা নিমপাতার ফেসপ্যাক ত্বকে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে পারে।
তা ছাড়া গরমে ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলুন। হালকা ও প্রাকৃতিক সাজসজ্জাই গরমের দিনগুলোর জন্য আরামদায়ক।
সাজসজ্জা :
♦ বেজ মেকআপ : ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে হালকা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে ভারী ভাব এনে দেবে না।
♦ চোখের সাজ : ওয়াটার প্রুফ কাজল, আইলাইনার এবং মাসকারা ব্যবহার করুন। গরমে ঘামে এগুলো ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। চোখের পাতায় হালকা আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন।
♦ লিপস্টিক : ম্যাট লিপস্টিকের চেয়ে হালকা শেডের লিপগ্লস বা টিন্টেড লিপবাম ব্যবহার করুন। ন্যুড, পিংক, কোরাল শেডগুলো গরমে ভালো লাগবে।
চুলের যত্ন :
আর হ্যাঁ, গরমে চুল সহজে চিটচিটে হয়ে যায় এবং মাথার ত্বক ঘামে ভিজে থাকে। নিয়মিত শ্যাম্পু করুন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। বাইরে বের হওয়ার আগে চুল বেঁধে রাখুন বা টুপি ব্যবহার করুন। এতে বাইরের দূষণ, ধুলোময়লা এবং সূর্যের তাপ (ক্ষতিকর রশ্মি) থেকে চুল বাঁচবে।
গরমে খাবারদাবার
রান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌস বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় খাবার খাওয়ার প্রতি সচেতন হলে সব সময় সুস্থ থাকা যায়।’ এসময় কোন খাবারগুলো খাওয়া ঠিক, কোনগুলো ঠিক নয়, তা জানতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। টাটকা শরবত, ডাব, শসা, মাঠা, বাঙ্গি, লাচ্ছি, পুদিনাযুক্ত খাবার পেট ঠান্ডা রাখবে। পেট ঠান্ডা রাখবে বেলের শরবতও। আখের শরবত জোগাড় করতে না পারলে আখের গুড় গুলিয়ে শরবত পান করতে পারেন। সবজির মধ্যে ঝিঙে, ধুন্দল, লাউ, উচ্ছে, পাটশাক, শজিনা ডাঁটা বেশি পরিমাণে খাবেন। গরু, খাসি খেলে গরমে অস্থির লাগে। শিং, মাগুর, শোল মাছ ও মুরগি খেতে পারেন। রান্নায় কম মসলা দিন। ভাজাপোড়া খাওয়া বাদ দিন। দই-চিড়া, কর্ন ফ্লেকস বা ওটস খেতে পারেন। বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা কিছু খেয়ে বসবেন না। বিশ্রাম না নিয়ে ঠান্ডা খাবার খেলে সর্দি লেগে যাবে। আইস টি বা কোল্ড কফিতেও আরাম পাবেন।
গরমের এই তীব্রতা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এই টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন। একটু সচেতন হলে গরমকালেও সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।