ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির পর জুলাই আন্দোলনের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান (২৭) জামিন পেয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে কীসের ভিত্তিতে ওই রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে সরকার। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসংগতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দায়ের করা মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততার তদন্ত সম্পন্ন করে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অতিসত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন রিকশাচালক আজিজুর রহমান। পরে তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট মো. আরিফুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টায় চলতি বছরের এপ্রিলে ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় গত শনিবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী ওই রিকশাচালকের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় কারামুক্তিতে আর বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
শোক প্রকাশ করতে যাওয়া রিকশাচালককে আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শোক জানাতে গিয়ে অন্য অনেক নাগরিকের মতো মো. আজিজুর রহমান নামে একজন রিকশাচালকও মব সন্ত্রাসের শিকার হন। তারপর তাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। জুলাই আন্দোলনে দায়ের হওয়া মামলাগুলোয় অনেক নিরীহ নিরপরাধ নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেবল শোক জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিককে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি সরকারের নিজস্ব ঘোষিত নীতি ও নাগরিকের প্রতি অঙ্গীকারেরও ঘোরতর বরখেলাপ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনপীড়নে লিপ্ত হয়, তবে তা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, অনেকেই বিষয়টিকে হত্যা মামলা হিসেবে প্রচার করছে, যা সর্বৈব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। আটক রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি। তাকে মূলত গত এপ্রিলে ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছে, যা পেনাল কোডের একটি নিয়মিত মামলা।