যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টো শহরের ক্রিসেন্ট পার্ক এলাকায় মার্ক জাকারবার্গের বাড়ির ভেতরে চালু একটি স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। মেটার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ প্রায় চার বছর ধরে বাড়ির ভেতর ওই স্কুল পরিচালনা করছিলেন। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশীদের অভিযোগের পর তিনি অবশেষে স্কুলটি বন্ধ করতে বাধ্য হন।
২০২১ সালে জাকারবার্গ ‘বিকেন বেন’ নামে স্কুলটি চালু করেন। নামটি নেওয়া হয় তার এক পোষা মুরগির নাম থেকে। সেখানে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শিশুকে বিশেষ শিক্ষাপদ্ধতিতে (যেখানে পরীক্ষার বদলে হাতে–কলমে শেখানো হয়) পাঠদান করা হতো। এটি মূলত মন্টেসরি ধাঁচের (শিশুর স্বাধীন অংশগ্রহণভিত্তিক) শিক্ষা কেন্দ্র ছিল।
তবে স্কুলের জন্য শহর প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছিল না। প্রথমদিকে আশপাশের বাসিন্দারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তারা ভেবেছিলেন, শিশুদের কোনো টিউশন বা খেলার আয়োজন চলছে। পরে দেখা যায়, নিয়মিতভাবে সেখানে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে।
২০২২ সালের দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অনেকে অভিযোগ করেন, শহর প্রশাসন জাকারবার্গকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। তাদের মতে, একজন কোটিপতির স্বার্থ রক্ষায় নিয়ম ভঙ্গ উপেক্ষা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী উইয়ার্ড পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, শহর প্রশাসন ও বাসিন্দাদের মধ্যে এ বিষয়ে যোগাযোগের নথি প্রায় ১,৬৬৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
স্কুল ছাড়াও জাকারবার্গের বাড়ির নির্মাণকাজ, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শব্দদূষণ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ বহুদিনের। জানা গেছে, তিনি আশপাশে অন্তত ১১টি সম্পত্তি কিনে একটি বড় প্রাঙ্গণ তৈরি করছেন। শহরের পরিদর্শকরা গেলে তাদের পেছনেও নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ি নিয়ে থাকতেন—যা এলাকাবাসীর বিরক্তির কারণ হয়।
২০২৪ সালে স্কুল বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়ার পর শহর প্রশাসন সমাধানের চেষ্টা করে। পরিকল্পনা পরিচালক জোনাথন লাইট প্রস্তাব দেন, কিছু শিক্ষামূলক কার্যক্রম সাময়িকভাবে চালু রাখা যেতে পারে। কিন্তু এতে ক্ষোভ আরও বাড়ে। এক বাসিন্দা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমরা যদি এমন নিয়ম ভঙ্গ করতাম, তাহলে কি চার বছর ছাড় পেতাম?’
জাকারবার্গের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, এটি কোনো বাণিজ্যিক স্কুল নয়; পারিবারিক উদ্যোগে পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রকল্প। এমনকি স্কুলটিকে পরিবারভিত্তিক ডে কেয়ার হিসেবে নিবন্ধনের পরিকল্পনাও করা হয়, তবে শেষ পর্যন্ত সেটি কার্যকর হয়নি।
চলতি বছরের মার্চে শহর প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ দেয়, ৩০ জুনের মধ্যে বিকেন বেন স্কুল বন্ধ করতে হবে, নইলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি নথি অনুযায়ী, আগস্টের মধ্যে স্কুলটি কার্যক্রম বন্ধ করে।
তবে মেটার মুখপাত্র ব্রায়ান বেকার জানিয়েছেন, স্কুলটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, বরং অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে সেটি কোথায়, তা প্রকাশ করা হয়নি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল