ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির নতুন ইমেজ জেনারেটর চালু হওয়ার পর জিবলি স্টাইলে তৈরি ছবি তুমুল ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর ফলে কপিরাইট ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওপেনএআই ইতোমধ্যে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে একাধিক মামলার মুখে পড়েছে, যেখানে অনুমতি ছাড়া শিল্পীদের কাজ ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্টুডিও জিবলি জাপানের একটি বিখ্যাত অ্যানিমেশন স্টুডিও, যারা ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’, ‘মাই নেবার টোটোরো’, ‘প্রিন্সেস মনোনোক’, ‘হাওলস মুভিং ক্যাসল’-এর মতো ক্ল্যাসিক মুভি তৈরি করেছে। চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীরা এই স্টাইল ব্যবহার করে ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ হামলার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও ছবি তৈরি করছেন, যা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান এক্সে নিজের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে জিবলি স্টাইলে তৈরি একটি ছবি যুক্ত করেছেন। এমনকি হোয়াইট হাউসও এক্সে একটি জিবলি স্টাইলের ছবি পোস্ট করেছে, যেখানে এক বিদেশি নাগরিককে নির্বাসনের আগে মার্কিন ইমিগ্রেশন কর্মী হাতকড়া পরিয়ে দিচ্ছেন।
মূলত এই টুলটি প্রথমে ফ্রি ছিল, তবে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে অল্টম্যান ঘোষণা দিয়েছেন যে এটি এখন শুধু পেইড ইউজারদের জন্য সীমিত থাকবে।
এআই বনাম শিল্পীরা
চ্যাটজিপিটি আগেও ছবি তৈরি করতে পারত, তবে নতুন জিপিটি-৪ ও মডেল ব্যবহার করে এখন খুব কম শব্দের মাধ্যমেও উন্নত মানের ছবি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে, যা পূর্বে সম্ভব ছিল না।
এই ট্রেন্ডের মধ্যে ২০১৬ সালের একটি ভিডিও আবারও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে স্টুডিও জিবলির কিংবদন্তি পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি এআই প্রযুক্তির ক্ষমতা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনও এই প্রযুক্তি আমার কাজে ব্যবহার করতে চাইব না। আমি মনে করি, এটি জীবনের প্রতি একটি অসম্মান।’
শিল্পীরা একে কপিরাইট লঙ্ঘন ও নৈতিকতার পরিপন্থী বলে অভিহিত করছেন। মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ব্লু-স্কাইতে শিল্পী ও ইলাস্ট্রেটর জেইড ‘চিরা’ লিখেছেন, ‘এটি আরও একবার শিল্পীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের উদাহরণ।’
ওপেনএআই কপিরাইট মামলা ও ফান্ডিং
ওপেনএআই বর্তমানে একাধিক কপিরাইট লঙ্ঘনের মামলার মুখে রয়েছে, যার মধ্যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি বড় মামলা রয়েছে। কোম্পানিটি হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের কাছে কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘ফেয়ার ইউজ’ ডকট্রিন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআই বর্তমানে সফটব্যাংকের নেতৃত্বে একটি ৪০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ডিং রাউন্ড সম্পন্ন করার পথে রয়েছে। যদি এটি সফল হয়, তাহলে এটি কোনো স্টার্টআপের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ফান্ডিং রাউন্ড হবে।
২০২৫ সালে ওপেনএআইয়ের বার্ষিক রাজস্ব ২.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, আর ২০২৪ সালে এটি ৩.৭ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, দ্য ভার্জ
বিডি প্রতিদিন/আশিক