অন্য দিনের তুলনায় অনুশীলনে মিরাজদের অনেক বেশি উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি টানা চার সিরিজ হারের ধাক্কা সামলে নেবে। হয়তো নেতৃত্বও বেঁচে যাবে মেহেদি হাসান মিরাজের। নেতৃত্ব পাওয়ার পর এখনো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস করেননি মিরাজ। বরং নেতৃত্বের ম্যাচগুলোতে ৯ হারের বিপরীতে জয় সাকল্যে দুটি। সিরিজ জয়ের সমীকরণের ম্যাচে টাইগাররা গতকাল ভিন্ন পরিকল্পনায় অনুশীলন করেন। মিরপুর স্টেডিয়ামে আগের তুলনায় ক্রিকেটাররা অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। মিরাজ বাহিনীর ব্যাটিং ও বোলিংয়ের কথা ছিল ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। কিন্তু স্পিনের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং করেন তানজিদ তামিম, সাইফ হাসান, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়রা। গত কয়েক সিরিজে এমন অনুশীলনের দেখা মেলেনি টাইগারদের। ফিল্ডিং সাজিয়ে ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেন স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ, ‘আমরা চেয়েছিলাম অনুশীলন যেন ম্যাচের মতো পরিবেশে হয়। ব্যাটারদের জন্য খুব দরকার ম্যাচের মতো মাসল মেমোরি তৈরি করা। যেন ওরা বুঝতে পারে, কাল যখন নামবে তখন এ রকম পরিস্থিতিই থাকবে। সিমন্স চাচ্ছিলেন ব্যাটারদের শেখাতে কীভাবে মিডল ওভারে সিঙ্গেল নিতে হয়, কীভাবে ঘুরিয়ে খেলা যায়। এজন্য স্পিনারদের ফিল্ড সেট করতেও বলা হয়েছিল। আজকের অনুশীলনটা তাই অনেকটা ম্যাচসদৃশ ছিল।’
প্রথম ওয়ানডেতে ২০৭ রান করেও বাংলাদেশ জিতেছিল ৭৪ রানে। মিরাজ বাহিনী ম্যাচটি জিতেছিল মূলত রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিনের মায়াবী জাদুতে। মিরপুরের আলোচিত কালো উইকেটে বল লাটিমের মতো ঘুরেছে। সেই উইকেটের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন রিশাদ। টার্ন, গুগলি ও আরমারে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং ধসিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ৬ উইকেট নেন। তার বোলিং স্পেল ছিল ৯-০-৩৫-৬। মিরাজের মিতব্যয়ী স্পেল ছিল ১০ ওভারে ১৬ রানে ১ উইকেট। তানভির উইকেট নেন একটি। স্পিন বিভাগকে শক্তিশালী করতে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘকায় বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ টাইগার একাদশে চার স্পিনার দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দুই দল আজ পরস্পরের বিপক্ষে ৪৯ নম্বর ম্যাচ খেলবে। আগের ৪৮ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ২২ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ২৪টি।
ম্যাচ আদলের অনুশীলনে স্পিনটা সহজে খেলার জন্য লম্বা হ্যান্ডেল ও ছোট ব্লেডের ‘মঙ্গুজ’ ব্যাট ব্যবহার করেন তানজিদ ও নাজমুল। মঙ্গুজ ব্যাটের ব্যবহারের ব্যাখ্যায় টাইগার স্পিন কোচ বলেন, ‘ছোট ব্যাট মানে, তোমার গ্র্যাভিটি লেভেল নিচে নামানো। স্পিনিং উইকেটে তোমার মাথা বলের খুব কাছে থাকতে হবে। ফুটওয়ার্কে আলসেমি থাকলে স্পিনে সহজে আউট হবে। ছোট ব্যাটে অনুশীলনের মানে সামনে বা পেছনে খেল, মাথা সবসময় বলের কাছাকাছি থাকে। তখন ভালো বলেও সিঙ্গেল নেওয়া সম্ভব।’
উইকেট নিয়ে ভীষণ আলোচনা। অস্ট্রেলিয়ার কিউরেটর টনি হেমিং কালো মাটিতে উইকেট বানিয়েছেন। প্রথম ওয়ানডের প্রথম ইনিংসে উইকেট অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। বল নিচু হলেও রান করেছেন ব্যাটাররা। যদিও টাইগার দুই ওপেনার সাইফ ও সৌম্য পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন। রান করেছেন ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় ও অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা ছিল কঠিন। বিশেষ করে ড্রাইভ খেলা ছিল অনেক কষ্টকর। উইকেট বল ঘুরছিল। স্বাগতিক তিন স্পিনার শতভাগ আদায় করে নেন উইকেট থেকে। বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে সেরা বোলিং রিশাদের। তার আগের সেরা বোলিং রেকর্ড ছিল বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। ২০২২ সালে বেসেটেরেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। উইকেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে স্পিন কোচ মুশতাক বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে অনেকবার এমন উইকেটে খেলেছি। দিল্লিতে যে উইকেটে অনিল কুম্বলে ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন, সেই উইকেট এর চেয়েও খারাপ ছিল।’