ভূমধ্যসাগরে গত তিনদিনে একাধিক নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক সন্তানসম্ভবা নারীসহ অন্তত তিনজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ অভিবাসনপ্রত্যাশী।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে থেকে জানা গেছে, ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ লাম্পেদুসার উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীবাহী একটি নৌকা ডুবে একজন মারা গেছেন এবং ২০ জনের বেশি নিখোঁজ হয়েছেন। নৌকাটি লিবিয়ার উপকূল থেকে রওয়ানা হয়ে ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। গত শুক্রবার ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ৩৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন।
রবিবার জাতিসংঘের শিশু অধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ইতালির কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নিকোলা দেল’আর্চিপ্রেতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার নৌকাডুবির পরপরই ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উপকূলে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন দেশটির কোস্টগার্ডের সদস্যরা। ১১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেন তারা। তাদের মধ্যে চারজন শিশু। ওই চার শিশু একা নৌকায় উঠেছিল, তাদের সঙ্গে কোনও অভিভাবক ছিল না।
ইউনিসেফ কর্মকর্তা নিকোলা দেল’আর্চিপ্রেতে জানান, উদ্ধার করা মরদেহটি ছিল একজন সন্তানসম্ভবা নারীর। জীবিত উদ্ধার হওয়া ১১ অভিবাসনপ্রত্যাশীর সঙ্গে ওই মরদেহটিও লাম্পেদুসায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিখোঁজদের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।
নিকোলা দেল’আর্চিপ্রেতে জানিয়েছেন, সমুদ্রে দুইদিন ভাসার পর গত শুক্রবার নৌকাটি ডুবে যায়।
রবিবার ভূমধ্যসাগরে ভাসমান একটি নৌকা থেকে ৮৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইতালির কোস্টগার্ড। উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে একজন নারী ও পাঁচজন শিশু রয়েছে।
নৌকায় থাকা যাত্রীরা পাকিস্তান, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়ার নাগরিক বলে জানানো হয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে, লাম্পেদুসা দ্বীপ থেকে ১৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ওই নৌকাটির অবস্থান নিশ্চিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের একটি নজরদারি বিমান। তারপরই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে দুটি টহলজাহাজ মোতায়েন করে ইতালীয় কোস্টগার্ড।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় নৌকাটির নিচের অংশে দু’জন পুরুষ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ পাওয়া যায়। এছাড়া আরও কয়েকজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপূর্ণ ছিল।
বার্তা সংস্থা এজিআই জানিয়েছে, নৌকায় থাকা অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থা সংকটজনক ছিল। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় অসুস্থ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের হেলিকপ্টারে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে কোস্টগার্ড।
ইতালির বার্তা সংস্থা আনসা জানিয়েছে, শ্বাসনালীতে পেট্রোল ঢুকে যাওয়ার কারণে দুই অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন। গুরুতর অসুস্থ ১৪ জনও একই সমস্যায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, ২০১৪ সাল থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ৩২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।
ইউনিসেফ কর্মকর্তা দেল’আর্চিপ্রেতে জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু বলে অনুমান করছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মুখপাত্র ফ্লাভিও দি জিয়াকোমো শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুটে কমপক্ষে ৯১৬ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস, আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ