সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বিসিএস পরীক্ষার দেড় যুগ পর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন আইনি লড়াই চালিয়ে আসা চাকরিপ্রত্যাশীরা। ২৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ফল বাতিল হওয়ায় বাদ পড়া ১ হাজার ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ-সংক্রান্ত তিনটি আপিল আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন।
এরপর থেকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম জমা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পদে সাময়িকভাবে সুপারিশ করা ৩ হাজার ৫৬৬ জন প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা গত ১২ থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে যারা চাকরিতে আছেন তাদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন সিনিয়রিটি কীভাবে হবে বা পরবর্তীতে পদোন্নতিতে জটিলতা নিয়ে। যদিও এ-সংক্রান্ত ২৭ ব্যাচের কর্মরতরা জনপ্রশাসনে যোগাযোগ করলে সেখানেও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা এবং অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, সিনিয়রিটি রুলস আছে। তবে তাদের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা ট্রেনিং কী হবে সেটি সরকার ঠিক করবে। বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া সরকারকে খুব ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। কোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে গেলে নিয়োগপত্র ও যোগদানের পর এসব বিষয় সামনে আসবে এবং এটি সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২৭তম বিসিএসে প্রথমবারের মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২৪ সালে পৃথক আবেদন করেন ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে। ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন। পরে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, দ্বিতীয় পরীক্ষায় অনেকেই উত্তীর্ণ হয়েছেন যারা প্রথম পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ ছিলেন। আবার অনেকে বাদও পড়েন। যারা চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের চাকরিতে ১৭ বছর কেটে গেছে। এখন প্রথম পরীক্ষা মোতাবেক অনেকের ক্যাডার পরিবর্তন হবে। দুটি রেজাল্টের ভিত্তিতে মেধা তালিকা কীভাবে হবে সেটিও প্রশ্ন। রায় মোতাবেক প্রথম পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরীক্ষার চাকরিরতরা থাকবেন। সে ক্ষেত্রে যারা চাকরি করছেন তারা বলছেন ১৭ বছর চাকরি করে রাষ্ট্র এবং সরকারকে সহযোগিতা করে এখন আমরা পিছিয়ে পড়ব কেন? প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকে চাকরি না করেও রাষ্ট্রকে কিছু না দিয়েও আমাদের ওপরে থাকবে সেটি কি আমাদের সঙ্গে অন্যায় নয়? মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা এক প্রার্থী পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেবেন। আরেক প্রার্থীর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন ৩০ বছর বয়সে পুলিশে গেলে ট্রেনিং নিতে পারতাম। এখন ৫০ বছর হয়ে গেছে যদি আবার ট্রেনিং করতে বলে মরেই যাব। প্রার্থীরা নিজেরাও জানে না তাদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে। ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন এন্টি পদে যোগ দেবে নাকি বর্তমান পদবি মোতাবেক যোগ দেবে সে বিষয়েও নেই সুস্পষ্ট নির্দেশনা। যারা চাকরিতে আছেন তাদের সবার মৌলিক প্রশিক্ষণ আছে যারা চাকরিতে ছিলেন না তাদের ক্ষেত্রে কীভাবে হবে তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারে এন্টি পদ সহকারী কমিশনার। এখন এই ব্যাচ উপসচিব হয়েছে অনেক আগেই। এখন যারা যোগ দেবে তারা সহকারী কমিশনার বা সমমানে যোগ দেবে নাকি উপসচিব বা সমমানে যোগ দেবে সেটিও প্রশ্ন রেখেছেন।