বৃদ্ধ লোকটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ইয়াংকি স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটের দিকে। সেই দৃষ্টিতে আছে হারানোর বেদনা। আছে পরম আবেগ। ইয়াংকি স্টেডিয়াম নিয়ে এমন আবেগ অনেকের মধ্যেই আছে। তবে মাইকেল নামের বৃদ্ধটির আবেগ জমা আছে অন্যখানে। তিনি কলোরাডোর বাসিন্দা। নিউইয়র্ক এসেছেন বেড়াতে। যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে। ইয়াংকি স্টেডিয়ামে পেলের নিউইয়র্ক কসমস এবং মায়ামি টোরোস ক্লাবের ম্যাচ দেখেছিলেন প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ অল্প সময়ে তার ভাসা ভাসা স্মৃতি তুলে ধরলেন।
‘গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় আমরা বন্ধুরা মিলে ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলের খেলা দেখতে এসেছিলাম। সেদিনটি জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ছিল। পুরো স্টেডিয়াম ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। নতুন ইয়াংকি স্টেডিয়ামে তুমি পেলের স্মৃতি খুঁজে পাবে না। পেলের সেই মাঠ এখন আর নেই।’ মাইকেল টানা বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেন না। থেমে থেমে অনেক কথাই বলেছেন। সেসব জোড়া দিলে দারুণ গল্প হয়ে যায়।
পেলের স্মৃতি বিজড়িত ইস্ট রাদারফোর্ডের জায়ান্ট স্টেডিয়াম এখন আর নেই। পুরোনো সেই মাঠ ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে। এই মাঠেই সামনের বছর বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে। তবে ইয়াংকি স্টেডিয়াম এখনো প্রায় একই স্থানে আছে। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে অবস্থিত ঐতিহাসিক ইয়াংকি স্টেডিয়াম মূলত বেসবলের জন্য পরিচিত। কিন্তু ১৯৭৬ সালে গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় এই মাঠে নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট পেলে। স্টেডিয়ামটির গ্যালারি সে দিন বেসবল নয়, ফুটবলপ্রেমীদের উল্লাসে মুখর ছিল। মার্কিন গণমাধ্যম লিখেছিল, ‘বেসবল মিটস ফুটবল’! পেলের সেই পুরোনো স্টেডিয়াম ভেঙে নতুন ইয়াংকি স্টেডিয়াম গড়ে ওঠে ২০০৯ সালে। পেলের স্মৃতি আজ শুধু ইতিহাসের পাতায়। স্থায়ী কোনো স্মারক নেই এখানে।
১৯৭৫ সালে কিংবদন্তি পেলে নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে আসেন। তার আগমন আমেরিকার ফুটবলে বিপ্লব নিয়ে আসে। ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের কাছে ক্লাব অফিস থেকে শুরু করে ইয়াঙ্কি স্টেডিয়ামের গর্জনে ছড়িয়ে পড়েছিল কসমসের খ্যাতি। নিউইয়র্ক কসমস হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন। সেই সময় এই ক্লাবের ম্যাচে গড়ে ৭০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকতেন। আমেরিকার মতো বেসবল-বাস্কেটবলপ্রধান দেশে পেলের কারণে ফুটবল আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। তবে বিখ্যাত সেই নিউইয়র্ক কসমসের চিহ্ন আজ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলের স্মৃতিও হারিয়ে গেছে অনেকটা। ১৯৮৫ সালে নর্থ আমেরিকান সকার লিগ ভেঙে গেলে নিউইয়র্ক কসমসও ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। ২০১০ সালে নতুন মালিকানায় দলটি আত্মপ্রকাশ করে। তবে মেজর লিগ সকারে ঠাঁই না পেয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় তারা। ক্লাবের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো আপডেট নেই বছরের পর বছর। স্টাফ, খেলোয়াড়, এমনকি ক্লাবের কার্যালয়ও যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে!
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ফুটবলপ্রেমী দাবি তুলছেন মেটলাইফ স্টেডিয়ামে পেলের স্মৃতি নিয়ে কিছু করার। হয়তো কোনো দিন নিউইয়র্ক কিংবা নিউজার্সি শহরের কোনো কোণে পেলের স্মৃতি চিহ্ন গড়ে উঠবে। সেই স্মৃতি চিহ্ন অনাগত প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে, ফুটবলের রাজা পেলে খেলেছিলেন এই শহরে!