হালাল রিজিক ভক্ষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের হালাল রিজিক ভক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)।
এই নির্দেশ শুধু নবী-রাসুলদের জন্য নয়, বরং সব ঈমানদারের জন্য এই নির্দেশ প্রযোজ্য। কারণ হালাল রিজিক ভক্ষণ করা ছাড়া ইবাদত কবুল হয় না। আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায় না। এমনকি জান্নাতেও যাওয়া যায় না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নাম এর উপযোগী।’ (মুসনদে আহমদ, দারেমি)।
কিছু হারাম উপার্জন তো মানুষকে শুধু আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে না, বরং তাদের আল্লাহর শত্রুতে রূপান্তর করে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, হাদিস : ২৭৮-২৭৯)।
তাই মুমিনের উচিত নিজেকে সুদ, ঘুষ, অন্যায়ভাবে আত্মসাত্কৃত অর্থসহ সব ধরনের হারাম উপার্জন থেকে দূরে রাখা। এতে কেউ না খেয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। কারণ প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব মহান আল্লাহর।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)।
পৃথিবীতে মোট কত প্রজাতির প্রাণী আছে, তার সঠিক সংখ্যা অনুমান করা দুষ্কর। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীতে ১০ মিলিয়নেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি বিদ্যমান। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র প্রায় ১৩ লাখ (১.৩ মিলিয়ন) প্রজাতি শনাক্ত বা বর্ণনা করা হয়েছে। এমন অনেক প্রাণী আছে, যেগুলোর ব্যাপারে মানুষের ধারণাই নেই।
মানুষের সবচেয়ে পরিচিত প্রাণীগোষ্ঠী হলো পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি থাকতে পারে। আর চার হাজার ৫০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী থাকতে পারে।
মহান আল্লাহর সৃষ্টি এই বিশাল প্রাণিকুল কোনো ধরনের সুদ, ঘুষ, চাঁদাবাজি ছাড়াই নিয়মিত রিজিক ভোগ করে যাচ্ছে। এমন এত পরিমাণ রিজিক ভোগ করে যাচ্ছে, যা আমাদের কল্পণার পরিধি থেকে বহু দূরে। এই যেমন নীল তিমির কথাই ধরা যাক। একে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত বসবাসকারী সবচেয়ে বড় প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
একটি নীল তিমির দৈর্ঘ্যে হতে পারে প্রায় ১০০ ফুট (৩০ মিটার) এবং ওজনে ২০০ টনেরও বেশি। শুধু একটি নীল তিমির জিভের ওজনই হাতির সমান হতে পারে। আর তার হৃৎপিণ্ডের ওজন প্রায় একটি গাড়ির সমান। মহান আল্লাহ তাঁর এই বিশাল প্রাণীকে দৈনিক চার টন ক্রিল খাওয়ান। ক্রিল হলো চিংড়ির মতো ক্ষুদ্রাকৃতির একটি প্রাণী। সাগরে এ রকম কী পরিমাণ নীল তিমি আছে, তার সঠিক হিসাব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
এবার আসি স্থলে, অনেকের মতে, স্থলচর প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাবার খায় আফ্রিকান হাতি। আফ্রিকান হাতি সব ধরনের উদ্ভিদজাত খাবার খায়; ঘাস, ফল, পাতা, শিকড় এবং গাছের বাকল পর্যন্ত খায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একেকটি আফ্রিকান হাতি প্রায় ৭৫ থেকে ১৫০ কেজি খাবার খায়। এরা দিনে গড়ে ১৬ ঘণ্টা শুধু খাবার খেতেই ব্যয় করে!
তথ্যমতে, পৃথিবীতে এই জাতের হাতির সংখ্যা আনুমানিক চার লাখ ১৫ হাজার। যদিও এর সঠিক হিসাব কারো জানা থাকার কথা নয়। এ রকম বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি প্রাণীকে তিনি দৈনিক রিজিক দিয়ে যাচ্ছেন, খাবারসহ তাদের জীবনের সব প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের কোনো সুদ-ঘুষ খেতে হয় না, হারাম উপার্জন করতে হয় না।
মানুষও যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে হারাম থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে মহান আল্লাহ তাকে অবশ্যই অপ্রত্যাশিত রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন, যা সে কল্পনাও করেনি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ