বাংলাদেশ প্রতিদিন : ঈদ উপলক্ষে বাজারে আসা ওয়ালটন নতুন মডেলের ফ্রিজের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার সম্পর্কে বলুন।
তাহসিনুল হক : ঈদুল ফিতর সামনে রেখে অর্ধশতাধিক অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ বেশ কিছু নতুন মডেলের ফ্রিজ বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। এরমধ্যে ৬৫২ লিটার ধারণ ক্ষমতার মাল্টি-কালার ডিজাইনের সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর, নাইন-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল মোডসমৃদ্ধ ৬৬০ লিটার ফ্রেঞ্চ ডোর রেফ্রিজারেটর, ইউরোপিয়ান ডিজাইনের ৩৪৩ লিটার অত্যাধুনিক নন-ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর, ৩০৩ লিটার ভার্টিকাল নন-ফ্রস্ট ফ্রিজার, ২২৪ লিটার বেভারেজ কুলার, কনভার্টিবল মোডের ২৫৫ লিটার চেস্ট ফ্রিজার এবং কনফেকশনারি কুলার। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ওয়ালটনের বিশ্বমানের এসব ফ্রিজ প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি বাড়িয়ে দেবে ঘরের আভিজাত্য। ওয়ালটন নতুন মডেলে ব্যবহৃত এআই ডক্টর ফিচার গ্রাহকের বাসায় ব্যবহৃত ফ্রিজে কোনো সমস্যা থাকলে তা আগেই ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টারের প্রতিনিধিরা জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ফ্রিজের সমস্যাটি সমাধান করবেন। ফ্রিজের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক পছন্দমতো সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম। এসব ফ্রিজে রয়েছে ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর (আইজিটি), স্মার্ট কন্ট্রোল, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, চাইল্ড লক, থ্রি লেয়ার ওডোর গার্ড ও হিউম্যান ডিটেক্টর। স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় ফ্রিজের দরজা না খুলে হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ফ্রিজে দেশের নম্বর ওয়ান অবস্থান ধরে রাখার পেছনের কারণগুলো কী?
তাহসিনুল হক : দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ওয়ালটন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন টিমের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্রিজে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ও ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ালটন ফ্রিজ যেমন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, তেমনি দামেও সাশ্রয়ী। ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ওয়ালটন ফ্রিজ। পাশাপাশি রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা। মূলত এসব কারণেই দেশের রেফ্রিজারেটর বাজারের বেশির ভাগ ক্রেতার আস্থা অর্জন করে সুপার ব্র্যান্ড হয়েছে ওয়ালটন ফ্রিজ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : রেফ্রিজারেটরের সুপার ব্র্যান্ডের তকমা ধরে রাখতে কোন জায়গায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন?
তাহসিনুল হক : দেশি রেফ্রিজারেটর বাজারে শীর্ষস্থান বজায় রাখতে রেফ্রিজারেটর খাতের অটোমেশন, পণ্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে অধিক জোর দিয়েছি আমরা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন নতুন যে অটোমেশন প্রযুক্তি আছে সেগুলোর ব্যবহার বাড়াতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও ফিচারের পণ্য উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণায়ও প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আমাদের উদ্ভাবনী পণ্য উৎপাদনের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চাহিদা পরিবর্তিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে ওয়ালটনের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওয়ালটন কতটা এগিয়ে?
তাহসিনুল হক : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ উৎপাদন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহার করা হচ্ছে এমএসও প্লাস (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অব থিংস বেজড এই প্রযুক্তি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : মূল্যস্ফীতিতে ফ্রিজের দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাহসিনুল হক : ওয়ালটন ২০০৮ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফ্রিজ উৎপাদন শুরুর পর ফ্রিজের দাম মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের হাতের নাগালে এসেছে। এখন সব শ্রেণি, পেশা ও আয়ের লোকের ঘরে পৌঁছে গেছে ফ্রিজ। চলমান ডলার সংকটের কারণে বেসিক কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে উৎপাদন ব্যয় যে অনুপাতে বেড়েছে সেই হারে আমরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করিনি। বরং ফ্রিজের দাম গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখেছি। কেননা আমাদের কাছে গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টি সবচেয়ে বড় ব্যাপার। বাংলাদেশে ঈদের সময়টাকে ফ্রিজ বিক্রির প্রধান মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সারা বছরের বিক্রির প্রায় ৭০ ভাগ ফ্রিজ বিক্রি হয় ঈুদল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঈদের মৌসুমে ফ্রিজের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ ও বিক্রিতে শীর্ষস্থান বজায় রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ওয়ালটন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়ালটন ফ্রিজের দাম, কিস্তিসহ অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে বলুন?
তাহসিনুল হক : ঈদবাজারে সব শ্রেণি, পেশা ও আয়ের ক্রেতাদের জন্য ওয়ালটনের রয়েছে শত শত ডিজাইন ও মডেলের রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এসব ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আছে জিরো ইন্টারেস্টে ৬ মাসের সহজ কিস্তিসহ সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের কিস্তি সুবিধা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়ালটন ফ্রিজ ক্রয়ে কোনো বিশেষ সুবিধা রয়েছে কি?
তাহসিনুল হক : প্রতিটি বড় উৎসবেই ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেয় ওয়ালটন। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ‘ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন ২২’। ওয়ালটন ফ্রিজের ক্রেতাদের জন্য আবারও মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রত্যেক ক্রেতার জন্য রয়েছে নিশ্চিত উপহার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়ালটন ফ্রিজের বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে তথ্য দিন।
তাহসিনুল হক : আন্তর্জাতিকমানের নিশ্চয়তায় দেওয়া হচ্ছে এক বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, ১২ বছরের কম্প্রেসর গ্যারান্টি এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবা। দেশের প্রথম আইএসও সার্টিফাইড ও সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের আওতায় দেশব্যাপী বিস্তৃত ৯০টিরও বেশি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওয়ালটন ফ্রিজ রপ্তানি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তাহসিনুল হক : ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড এখন ওয়ালটনের। ব্র্যান্ড তিনটি হলো এসিসি (ACC), জানুসি ইলেকট্রোমেকানিকা (ZEM) এবং ভার্ডিকটার (Verdichter)। ইউরোপীয় এই তিনটি ব্র্যান্ডের কম্প্রেসর, ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে ওয়ালটন। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ইলেকট্রনিকস পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় মেলায়ও অংশ নিচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে আমেরিকার লাস ভেগাসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকসের সর্ববৃহৎ মেলা ‘সিইএস ফেয়ার’ এবং চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে অংশ নিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এসব উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।