নিউইয়র্কে স্টেট বিএনপির সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘কদিন ধরে সারা দেশের মানুষ একটি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন, কি হচ্ছে, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, আমরা কী করছি, আবার কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবো, এমন একটি ধূম্রজাল কেন, কেন দেখা যাচ্ছে তা আমি বুঝি না।’
জ্যাকসন হাইটসের সন্নিকটে এলমহার্স্টে একটি পার্টি হলে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সমাবেশ হয়।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘আজ পরিষ্কার যে ফ্যাসিবাদকে আমরা বিদায় করেছি গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য। যে গণতান্ত্রিক অধিকার আমার ছিল না, ভোটের অধিকার ছিল না, আমার সরকার আমি নির্বাচিত করতে পারিনি, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমার সরকার নির্বাচিত করে দিত।’
‘আবার এখন দেখি মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানেই আবার সেই ফ্যাসিবাদকে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেজন্য মায়াকান্নাও কাঁদেন অনেকে। এটা দুর্ভাগ্য, কারণ এটা পরিষ্কার আমরা এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করেছি, কারো দয়ায় বাংলাদেশ পাইনি। তবে এটা আমরা সবসময় বলি, মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী হয় না মুখ্যমন্ত্রী হয়। মুখ্যমন্ত্রী বানানোর জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। কাজেই এখনো সেই ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপি সবসময় জনগণের পাশে আছে। যে কারণে বিএনপিকে আগে হাসিনাও ভয় পেত; নির্বাচন দেব কার জন্য, ওই তারেক এসে দেশ চালাবে-এজন্য। আবার এখন নির্বাচন দেয় না যে, নির্বাচন দিলেই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তাই নির্বাচন যত পেছানো যায়।’
আব্দুস সালাম আরও বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্র কেন? এটা পরিষ্কার, যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা আবার সেই আধিপত্যবাদের শক্তিকে বাংলাদেশে আনতে চায়।’
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের রক্তঋণ শোধের জন্যই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। একটা ধূম্রজালের মধ্যে রেখে সমগ্র জাতিকে অন্ধকারে রাখার কোনো মানে হয় না।’
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘সমগ্র জাতি অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছে যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই। তারা কত মানুষের রক্তবন্যা বইয়ে দিয়েছে সেটিও স্বীকার করতে চাচ্ছে না। তাই পতিত স্বৈরাচার যদি দাঁড়াতে পারে তাহলে আবারও হত্যা, জুলুম-নির্যাতন, লুটতরাজে মেতে উঠবে। তাই বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র পরিবার থেকে আমাদের দাবি হচ্ছে অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মাওলানা অলিঊল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, রাজপথে লড়াকু সৈনিক এবং বিএনপির চরম দুঃসময়ে হাল ধরা নেতা আব্দুস সালামের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও আওয়াজ উঠাতে চাই অবিলম্বে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে, তার সুফল পেতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদের পরিচালনায় এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপি নেত্রী রীতা রহমান, স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন (ভিপি) প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন স্টেট বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রইচ উদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বদরুল হক আজাদ, দেওয়ান কাউসার, আশরাফ হোসেন, হুমায়ুন কবীর, সাংবাদিক আনিসুর রহমান, ইমদাদুল ইসলাম জসিম, বিএনপি নেতা কাজী আসাদউল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দলের সভাপতি জাহাংগীর আলম, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তরের সভাপতি আহবাব চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ জাহিদ হোসেন, দক্ষিণের সাংগঠিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন মৃধা, বিএনপি নেতা ভিপি আলমগীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, জীবন শফিক, ইঞ্জিনিয়ার মাইনুদ্দিন, শেখ তারেক হাসান, বাঁধন, শাহাবুদ্দিন শাহীন, রানা চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে ইফতারের প্রাক্কালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ