ভারতের প্রধান প্রধান বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা ও ২৬ জন পর্যটকের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য নিরাপত্তা বিধানের কাজ করছে। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা মজুদ ছিল। শুধু পেহেলগামের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা এবং তার আশপাশে ছিল না কোনো প্রহরী বা নিরাপত্তাব্যবস্থা।
পেহেলগামের পর্যটন এলাকা থেকে পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকার দূরত্ব দেড় থেকে দুই শ কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কিংবা প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের জিজ্ঞাসা হলো সেখান থেকে এ দূরত্ব অতিক্রম করে সন্ত্রাসীরা তাদের আক্রমণ পরিচালনা করে আবার কিভাবে নিরাপদে ফিরে যেতে সক্ষম হলো? প্রসঙ্গত, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৮ এপ্রিল রাজধানী শ্রীনগর সফর করে কাশ্মীরের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন। তবে সে সভায় কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে ডাকা হয়নি। তা ছাড়া পেহেলগামে সংঘটিত সে আক্রমণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাৎক্ষণিকভাবে সে অঞ্চল সফর না করে ঘটনার দুদিন পর চলে গেলেন বিহার রাজ্যে।
সেখানে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আয়োজিত রাজনৈতিক সভায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি বললেন, তিনি আক্রমণকারীদের বিশ্বের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত খুঁজবেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫ ধারা বাতিল করে বিজেপিদলীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি রাজ্যে তাঁদের সব অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নাকচ করে দিয়েছিলেন। সেটি ছিল কাশ্মীরের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের সঙ্গে ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকারের একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক চুক্তির বেপরোয়া লঙ্ঘন। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জান-মালের নিরাপত্তা কিংবা প্রতিরক্ষার দায়িত্বও তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
কাশ্মীরের প্রত্যেক নাগরিক পেহেলগামের সেই পৈশাচিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করতে পারেনি। পাকিস্তান সে ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে একটি যথাযথ ব্যবস্থা দাবি করেছিল। এমনকি একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তাবও দিয়েছে পাকিস্তান।
কিন্তু ভারত কিংবা মোদি সরকার সে পথে হাঁটতে রাজি নয়। তারা বিষয়টিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি চূড়ান্ত সংঘর্ষের পর্যায়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী বলে অনেকেই মনে করছেন। ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের নেতা গুরুপন্থ সিং পান্নু পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলাকে একটি সাজানো নাটক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন জয়ের জন্য হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনায় ভারতের দুই কোটি শিখ পাকিস্তানকে সমর্থন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। পান্নু বলেছেন, পাঞ্জাবকে ডিঙিয়ে পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে শিখরা ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকারকে কোনোমতেই মদদ দেবে না। পেহেলগাম হামলার প্রাথমিক তদন্ত না করেই ভারত এরই মধ্যে এক হাজার ৫০০ কাশ্মীরি অধিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং কোনো কোনো জায়গায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরাও অনেকে বলছেন, এটা ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতা, নাকি ইচ্ছাকৃত সাজানো ঘটনা এখনো সব কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখনো প্রতিশোধমূলক আক্রমণ জোরদার না করে সিন্ধুর পানিচুক্তি বাতিলসহ কৌশলগত কিছু কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলার পর পেহেলগাম হামলাই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ পরিচালিত প্রশিক্ষণ শিবিরে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছিল। তার ছয় বছর পর আবারও ভারত নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছে।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের বিবৃতির বিরুদ্ধে ভারত অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কারণ বিবৃতিতে জাতিসংঘ জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের কথা উল্লেখ করলেও ভারত শব্দটি যুক্ত করেনি। ভারত এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান সরকার জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখার উভয় দিকে বিগত কয়েক দিনে বেশ কিছু গুলি বিনিময় হয়েছে। ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধুর পানিচুক্তি বাতিল করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি চুক্তি বাতিল করাকে পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধের শামিল বলে উল্লেখ করেছে। তারই সূত্র ধরে পাকিস্তান ১৯৭২-এ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত শিমলা চুক্তি বাতিল করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১-এ সংঘটিত যুদ্ধের পর এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাতে নিঃশর্তে পাকিস্তানের প্রায় ৯৩ হাজার বন্দি সৈনিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া বলা হয়েছিল, কাশ্মীর সমস্যাসহ দুই দেশের মধ্যে বিরাজিত সব সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। কিন্তু শিমলা চুক্তি বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে গণভোট কিংবা অন্যান্য যেকোনো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাকিস্তান জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শরণাপন্ন হওয়ার পথ পরিষ্কার করে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত মোটেও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা কিংবা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন না। দূরদৃষ্টি দিয়ে অনেক কিছু বিবেচনা না করেই ভারত সিন্ধুর পানিচুক্তি বাতিলের মধ্য দিয়ে যে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে তার কোনো বিকল্প সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে। তা ছাড়া পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ভারত এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট কিংবা নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান আক্রমণের ব্যাপারেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শক্ত সমর্থন পেতে সমর্থ হয়নি। রাশিয়া এ সংঘাতে জড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্যদিকে পাকিস্তান আক্রান্ত হলে চীন, তুরস্ক, ইরান এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন ও তাদের কাছ থেকে সামরিক সহযোগিতা পেতে পারে। এরই মধ্যে নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান এরই মধ্যে চীনের কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও তুরস্কের কাছ থেকে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল দোহানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সাম্প্রতিক বৈঠকে মোদি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক জবাব দেওয়াই এখন আমাদের জাতীয় সংকল্প।’ তা ছাড়া, ফ্রান্সের কাছ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের আরো ২৬টি বহুমুখী আক্রমণের উপযোগী রাফালে জঙ্গি বিমান সংগ্রহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর আগে ফ্রান্সের কাছে থেকে আরো ৩৬টি উন্নতমান ও প্রযুক্তির রাফালে জঙ্গিবিমান খরিদ করেন মোদি, যা এখন ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ভারত পাকিস্তানের ওপর পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে, যা যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। খাজা আসিফ বলেছেন, ‘আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে যত মারাত্মকই হোক শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর থাকবে না।’ এ ব্যাপারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার চীন, তুরস্ক ও সৌদি আরবসহ অন্য কিছু দেশের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বলে জানা গেছে। তাতে চীন ও তুরস্ক সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ভারতের বিভিন্ন কৌশলগত অবস্থানে সরেজমিনে কাজ করছে বলে জানা গেছে। ভারতের কাছে রাশিয়া ছাড়াও ইসরায়েলের অত্যন্ত উন্নতমানের বিশাল অস্ত্রশস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে সামরিক সূত্রে জানা গেছে।
বেলুচিস্তানে অসন্তোষ সৃষ্টির পেছনে ভারতের মদদ রয়েছে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু ভারতের নিজের ব্যাপারে তার অভ্যন্তরীণ শক্তি বা অঞ্চলসমূহের মেলবন্ধন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বহু ধর্ম, জাতি বা ভাষাভাষী হওয়ার কারণের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো সেভাবে কোনো বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে স্বাধীনতা পেয়ে ভারত নিজেই বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র ঔপনিবেশিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। সে কারণে তাদের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোনো জাতীয় ঐক্য বা সংহতি গড়ে ওঠেনি। বরং সমগ্র ভারতব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব গড়ে উঠতে দেখা গেছে।
ভারত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা তাঁদের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে তাঁদের একটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তা এখন অনেকটাই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামরিক দিক থেকে ভারতকে যতই শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হোক না কেন, জাতীয় ঐক্য কিংবা সংহতির দিক থেকে দিনে দিনে তা আরো বিচ্ছিন্ন কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে কেউ যেন কারো ওপর কাঙ্ক্ষিতভাবে আস্থা কিংবা বিশ্বাস ধরে রাখতে পারছে না। ভারতের দক্ষিণীরা হিন্দি ভাষার প্রাধান্যকে যেমন মেনে নিতে পারে না, তেমনি তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেও হারাতে চায় না। তা ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বৈষম্যের নানা অভিযোগ, যা নিরসনে কেন্দ্র যে খুব সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে তাও নয়। হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে রাজ্যগুলোর একটি ‘ফেডারেল স্ট্রাকচার’ কিংবা স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি বিবেচনা করতে রাজি নয়। সে কারণেই সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও তার ৩৫ক ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা কাশ্মীরিরা কখনো মেনে নিতে পারেনি। দ্বিখণ্ডিত কাশ্মীর সমস্যা ভারত বিভক্তির গত প্রায় ৭৮ বছরেও সমাধান হয়নি। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড এ যুগে কোনো সমস্যার যৌক্তিক সমাধান দিতে না পারলেও তাকে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তদুপরি কোনো রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে যুদ্ধ কিংবা পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বশান্তি কিংবা মানুষের অস্তিত্বকেই আরো বিপর্যস্ত করে তুলবে।
পেহেলগামকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান হওয়া উচিত। দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে অবিলম্বে উপযুক্ত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারত যত অভিযোগই উত্থাপন করুক না কেন, পাকিস্তান জানা মতে বর্তমানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আগের মতো সমর্থন দিচ্ছে না। এটা ঠিক যে পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যার একটা সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান চায়। সেটা কোনো অন্যায্য দাবি নয়। এ উপমহাদেশের মানুষের শান্তি, স্বস্তি, উন্নয়ন এবং সর্বোপরি বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য এ ধরনের সব সমস্যার একটি টেকসই সমাধান প্রয়োজন। যেকোনো পরিস্থিতিতে হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যে সশস্ত্র যুদ্ধ বাধানো। পেহেলগামে সংঘটিত ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর বিক্ষুব্ধ ভারত যতই উত্তেজিত হয়ে থাকুক, তারা এখনো তাদের সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণরেখাকে কেন্দ্র করেই চালিয়ে যাচ্ছে। বড় কোনো আক্রমণ, সংঘাত বা সংঘর্ষ শুরু করেনি। সুতরাং দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি প্রতিবেশী দেশের অর্থবহ আলাপ-আলোচনায় বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। নতুবা যুদ্ধ কারো জন্য কোনো চূড়ান্ত বিজয় বয়ে আনবে না।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বিডি প্রতিদিন/আশিক