আমরা অনেক সময় ঠান্ডা পানি খেলেই দাঁতে ঝাঁঝালো ব্যথা অনুভব করি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, দাঁত কেন এত সংবেদনশীল? গবেষকরা বলছেন, এর উত্তর লুকিয়ে আছে প্রায় ৫০ কোটি বছর আগের এক প্রাচীন মাছের গায়ে।
সম্প্রতি ‘নেচার’ (Nature) নামের বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দাঁতের যে কাঠামো আমরা আজ চিনি, তার উৎপত্তি হয়েছিল একেবারে ভিন্ন কাজে। দাঁত মূলত চিবানোর জন্য নয়, বরং স্পর্শ ও সংবেদন বোঝার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল গবেষক ইয়ারা হারিডি। তিনি মূলত খুঁজছিলেন এমন প্রাণীর প্রাচীনতম জীবাশ্ম, যার মেরুদণ্ড রয়েছে। এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাদুঘর থেকে শত শত ছোট জীবাশ্ম নমুনা সংগ্রহ করে সিটি স্ক্যান (CT scan) পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেন।
এ গবেষণায় তিনি বিশেষ মনোযোগ দেন দাঁতের অভ্যন্তরের ডেন্টিন (dentine) নামের স্তরে, যা স্নায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সংবেদন পাঠায়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রাচীন মাছের বাইরের অঙ্গেও এমন দাঁতের মতো গঠন ছিল, যাকে বলা হয় ওডোন্টোড (odontode)। এগুলো মুখে ছিল না, বরং মাছের গায়ে বর্মের মতো ছড়ানো ছিল।
এই ওডোন্টোডগুলো একসময় দাঁতের রূপ নিয়েছে। তবে প্রথম দিকে এগুলোর কাজ ছিল সংবেদন বোঝা—তাপমাত্রা, পানি প্রবাহ কিংবা আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানা। গবেষকরা বলছেন, আধুনিক ক্যাটফিশ, শার্ক এবং স্টিংরে-তেও এই বাইরের দাঁতগুলোতে স্নায়ু রয়েছে, যা স্পর্শ অনুভব করতে পারে।
হারিডির বিশ্লেষণে এক সময় মনে করা হয়েছিল 'আনাটোলেপিস' (Anatolepis) নামের একটি জীবাশ্মই প্রথম মেরুদণ্ডী মাছ। তবে পরে দেখা যায়, এর গঠনের সঙ্গে আর্থ্রোপড (যেমন কাঁকড়া, মাকড়সা) গোত্রের সংবেদন অঙ্গ ‘সেন্সিলা’র মিল রয়েছে। অর্থাৎ এটি আসলে মেরুদণ্ডী ছিল না।
গবেষকরা মনে করেন, তখনকার প্রাণীরা ছিল এক ভয়ংকর শিকারি পরিবেশে। তাই চারপাশের পানি বা কম্পন বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা তাদের বাঁচিয়ে রাখত। সময়ের সঙ্গে মাছেরা চোয়াল তৈরি করে এবং এই ওডোন্টোডগুলো ধীরে ধীরে মুখের আশেপাশে গজিয়ে দাঁতে রূপ নেয়।
গবেষণার সিনিয়র লেখক নিল শুবিন বলেন, আমাদের দাঁতের সংবেদনশীলতা আসলে একটি প্রাচীন বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের মাছ পূর্বপুরুষদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল