যন্ত্রণা (১৯৮৮) : কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘যন্ত্রণা’ ছবির গল্পে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রয়াত নায়ক মান্না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর বিভিন্ন অফিসে চাকরির জন্য ধরনা দিলেও কপালে তাদের চাকরি জোটে না। এ হতাশায় বেকার চার বন্ধু অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, একসময় দেশদ্রোহী হিসেবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। বিচারে ফাঁসির আদেশ হয় তাদের। ছবির শেষে যখন তাদের মুখে শোনা যায়- ‘তবুও যন্ত্রণার শেষ হলো কি?’ তখন প্রেক্ষাগৃহে ছিল পিনপতন নীরবতা। এ একটি সংলাপই বলে দেয় আসলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ এত বছর পরও বেকার ছাত্রদের যন্ত্রণা শেষ হয়নি।
চেতনা (১৯৯০) : ছটকু আহমেদ পরিচালিত ছবি ‘চেতনা’। ওই সময় স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল আলোচনার অগ্রভাগে। এ ছবির গল্পে দেখা যায়- শিক্ষক আলমগীরকে তার ছাত্ররা মনেপ্রাণে ভালোবাসে। এ ছাত্রদের মধ্যে নায়ক হিসেবে ছিলেন অমিত হাসান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিশা সওদাগরও। একসময় আলমগীর খুন হন প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী এ টি এম শামসুজ্জামানের হাতে। প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর খবর শুনে আন্দোলন শুর“ করে ছাত্ররা। বিশেষ করে এ টি এমের আধিপত্যের এলাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে প্রতিশোধ নেওয়া শুর“ করে অমিত, মিশাসহ অন্য ছাত্ররা। শুর“ হয় অন্যায়ের বির“দ্ধে ন্যায়ের লড়াই। ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করা অভিনেতারা এ ছবির মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতে অর্থাৎ বাস্তবে ছাত্রদের করণীয় কী?
ত্রাস (১৯৯২) : কাজী হায়াৎ পরিচালিত ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আরেকটি আলোচিত ছবি ‘ত্রাস’। এ ছবিতেও অভিনয় করেছেন প্রয়াত মান্না। ছবির গল্পে দেখা যায়, কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটানো বখাটে ছাত্রদের আধিপত্যে সাধারণ ছাত্ররা অসহায় হয়ে পড়ছে। কলেজের ছাত্রী নায়িকা কবিতাকে অসম্মান করে কাবিলা। ওই সময় মাঠে উপস্থিাত থাকা মান্না সবার সামনেই কাবিলাকে শায়েস্তা করে। এর থেকে শুর“ হয় একের পর এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। দুর্নীতিগ্রস্ত অসৎ নেতা রাজিব, মিজু আহমেদের বির“দ্ধে অভিযান শুর“ করেন মান্না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে বরণ করে নিতে হয় ছাত্র রাজনীতির কর“ণ বাস্তবতা।
বিক্ষোভ (১৯৯৪) : প্রয়াত মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটি সুপারহিট ছবি ‘বিক্ষোভ’। এ ছবিতে ছাত্র রাজনীতির পুরো বিষয়টি গুছিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন পরিচালক। কীভাবে ছাত্র রাজনীতি শুর“ হয়, কীভাবে আধিপত্য তৈরি হয়, কীভাবে অসৎ নেতারা কলেজ ক্যাম্পাসে নিজেদের ক্যাডারদের পোষেণ, কীভাবে সাধারণ ছাত্ররা অসৎ নেতাদের টার্গেটে পরিণত হয়, কীভাবে সাধারণ ছাত্ররা বিপ্লবী হয়ে ওঠে- এসব বিষয় মূল থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন গল্পকার। আর এ ছবির মহত্ত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন অমর নায়ক সালমান শাহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শাবনূর। বিশেষ করে ছবির দুটি গান ‘একাত্তরের মা জননী’ ও ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়’ ছাত্রদের মধ্যে ন্যায়ের জন্য বিপ্লব তৈরি করে দেওয়াই যথেষ্ট।
আজকের প্রতিবাদ (১৯৯৪) : প্রয়াত চল”িচত্রকার চাষী নজর“ল ইসলাম নির্মাণ করেছিলেন ‘আজকের প্রতিবাদ’। এ ছবির গল্প ছিল শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বির“দ্ধে এক ছাত্রের র“খে দাঁড়ানোর বিষয়। নবাগত দোদুল ও লাজুককে নিয়ে চাষী এ ছবিতে দেখিয়েছেন সাধারণ ছাত্ররা একজোট হলে কীভাবে প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়ে অন্যায়কে শেষ করা যায়। এ ছবির সংলাপ ছিল বেশ প্রতিবাদী।
হুলিয়া (১৯৯৫) : নব্বই দশকে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তৈরি হয় ‘হুলিয়া’। এটি পরিচালনা করেছেন জীবন রহমান। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর সানী। গল্পে দেখা যায়- কলেজের বোকা ছাত্র ওমর সানী। আদর্শবান শিক্ষক প্রবীর মিত্র তার আত্মীয়। এক ঘটনায় এ শিক্ষককে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দেয় কুচক্রীরা। এরপর ওমর সানীর ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে ঘটনা বাড়তেই থাকে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ওমর সানী একসময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদ শুর“ করেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
মুক্তির সংগ্রাম (১৯৯৫) : সাধারণ ছাত্র থেকে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে ছবিটি পরিচালনা করেছেন উত্তম আকাশ। এ ছবিতেও অভিনয় করেছেন ওমর সানী। গল্পে দেখা যায়- রাজনীতির শিকার হয়ে পরিবার, বন্ধু, প্রেমিকা সবাই অসহায়। কলেজ ক্যাম্পাসের ক্যাডারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের রেষারেষি। এরপর শুর“ হয় ওমর সানীর প্রকাশ্য প্রতিবাদ। অসৎ সাদেক বা”চু সবাইকে শেল্টার দেন। পরে এ সাদেক বা”চুকে শেষ করে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে নিয়ে আসেন নায়ক।
অধিকার চাই (১৯৯৮) : ওয়াকিল আহমেদ পরিচালিত ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নির্মিত এ ছবিতেও অভিনয় করেছেন ওমর সানী। এর গল্পে দেখা যায়- ওমর সানী সাধারণ ও বোকা হলেও ক্লাসে মনোযোগী ছাত্র। একই কলেজের বখাটে ছাত্র মিশা সওদাগর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে ওমর সানীর বাবা বুলবুল আহমেদ ও শাবনূরের বোনকে হত্যা করে। এতে ওমর সানী প্রতিবাদী হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসেই মিশাকে খুন করেন; কিন্তু সমাজের মন্দ লোক হুমায়ুন ফরীদির আধিপত্যের শিকার হন সানী ও শাবনূর। তারপরও লড়তে থাকেন সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য।
বিপ্লবী জনতা (২০০১) : হাফিজ উদ্দিন পরিচালিত ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস। এর গল্পে দেখা যায়- হুমায়ুন ফরীদি ও রাজিবের নেতৃত্বে কলেজ ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের বিরক্ত করেন ফেরদৌস। নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে মাস্তানি করেন। একসময় শিক্ষক সোহেল রানা তাকে বোঝাতে সক্ষম হন। এরপর বদলে যান তিনি। নোংরা ছাত্র রাজনীতির বির“দ্ধে নিজেই শুর“ করেন প্রতিবাদ।
ইতিহাস (২০০২) : কাজী হায়াতের ‘ইতিহাস’ ছবির গল্পে দেখা যায়- ‘কলেজের সাধারণ ছাত্র কাজী মার“ফ। যে কোনো ঘটনায় দুর্নীতিগ্রস্ত এক অসৎ পুলিশের সঙ্গে তাকে মিশতে হয়। পরিস্থিাতির শিকার হয়ে সেই পুলিশ অফিসারের কারণে স্বাভাবিক জীবন হারান মার“ফ। জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসের সঙ্গে। কিন্তু সন্ত্রাসী হয়ে নিজেই দমন করতে থাকেন দুষ্টদের। কাজী হায়াতের এ ছবিটিও ছাত্র রাজনীতির শিকার হওয়ার এক ছাত্রের আত্মত্যাগ বলা যায়।
সাহসী মানুষ চাই (২০০৩) : প্রয়াত মহম্মদ হান্নান পরিচালিত এ ছবিটিও অনেকটা ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। গল্পে দেখা যায়- সাধারণ ছাত্রদের ওপর রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ছাত্ররা অত্যাচার শুর“ করে। শিক্ষককেও মানতে চায় না তারা। এসব অন্যায়ের বির“দ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন সাধারণ ছাত্র শাকিব খান। প্রতিশোধ নেওয়া শুর“ করেন তিনি।